সব দেশে জন্ম মানেই নাগরিকত্ব নয়! বিশ্বের ব্যতিক্রম নিয়মগুলো জানুন

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
অনেকের ধারণা-যেখানে জন্ম, সেখানেই নাগরিকত্ব। কিন্তু বাস্তবতা অনেক দেশে ভিন্ন। জন্মলগ্নেই নাগরিকত্ব পাওয়া সব দেশে স্বাভাবিক নয়। নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে বিশ্বের দেশগুলো মূলত দুটি মূল নীতি অনুসরণ করে: ☞ জুস সোলি (Jus Soli): জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব। ☞ জুস সানগুইনিস (Jus Sanguinis): পিতামাতার নাগরিকত্বের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব।
জুস সোলি- যেখানে জন্ম হয়, সেই দেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব দেয়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল শিশু জন্মলগ্নেই নাগরিকত্ব পায়। কিছু ব্যতিক্রম: বিদেশি কূটনীতিকের সন্তান।
জুস সানগুইনিস - পিতামাতার নাগরিকত্বের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব নির্ধারণ। জার্মানি, জাপান, ইতালি, ভারত, চীন, ভুটান, অস্ট্রিয়া জন্মলগ্নে শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পায় না, যদি পিতামাতা দেশটির নাগরিক না হন।
ইউরোপের দেশসমূহ-
⇨ জার্মানি: ২০০০ সালের আগে, জার্মানিতে জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব পাওয়া যেত না যদি না পিতামাতা জার্মান নাগরিক হন। বর্তমানে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।
⇨ ইতালি: নাগরিকত্ব মূলত পিতামাতার ভিত্তিতে নির্ধারিত। জন্মলগ্নে স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব নেই।
⇨ ভ্যাটিকান সিটি: এখানে জন্মলগ্নেই নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব নয়, এটি কেবল পিতামাতার অবস্থান ও ধর্মীয় দায়িত্বের উপর নির্ভরশীল।
⇨ অস্ট্রিয়া: জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব নির্ভর করে পিতামাতার নাগরিকত্বের ওপর।
⇨ ভুটান: জন্মলগ্নে নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম প্রযোজ্য।
এশিয়ার দেশসমূহ-
⇨ জাপান: জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব পেতে হলে পিতামাতা কমপক্ষে একজনকে জাপানি নাগরিক হতে হবে।
⇨ ভারত: ২০০৪ সালের আগে যেকোনো শিশুকে জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব দেওয়া হতো। তবে ২০০৪ থেকে এটি পিতামাতার নাগরিকত্বের ওপর নির্ভর করে।
⇨ চীন: নাগরিকত্ব মূলত পিতামাতার ভিত্তিতে নির্ধারিত।
উত্তর আমেরিকা ও অন্যান্য দেশ
⇨ যুক্তরাষ্ট্র: জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রদান করা হয়, কেবল বিদেশি কূটনীতিকদের সন্তান বাদ।
⇨ কানাডা: জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়, তবে কিছু বিশেষ শর্ত থাকতে পারে।
⇨ মেক্সিকো ও ব্রাজিল: জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।
কেন জন্মলগ্নেই নাগরিকত্ব সব দেশে স্বয়ংক্রিয় নয়?
☞ জাতীয়তাবাদ: দেশগুলো চায় নাগরিকত্ব শুধুমাত্র দেশের মূল জনগণ বা নাগরিকদের সন্তানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক।
☞ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ: জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব না দেওয়ার মাধ্যমে দেশগুলো অভিবাসনের হার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
☞ আইনি স্থিতিশীলতা: নাগরিকত্বের কঠোর নিয়ম আইনগত ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
☞ আর্থ-সামাজিক কারণে: জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব দেওয়া না হলে সরকার জনসংখ্যা এবং নাগরিক সেবা ব্যবস্থাকে আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে।
বিশেষ পরিস্থিতি-
☞ বিদেশি কূটনীতিকের সন্তান: অনেক দেশে, এমন সন্তান জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব পায় না, কারণ তারা দেশের নিয়ম অনুযায়ী "সভার অংশ" হিসেবে গণ্য হয় না।
☞ দ্বৈত নাগরিকত্ব: কিছু দেশে জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব না দেওয়ার কারণ হলো দ্বৈত নাগরিকত্ব সীমিত করা।
আন্তর্জাতিক উদাহরণ:
লেবানন, কুয়েত: জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব দেয় না।
মাল্টা: নির্দিষ্ট শর্তে জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব প্রযোজ্য।
আন্তর্জাতিক প্রভাব-
⇨ অভিবাসন ও ভিসা নীতি: জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব না দেওয়ার কারণে অভিবাসী পরিবারগুলো ভিসা, স্থায়ী বসবাস ও শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রভাবিত হতে পারে।
⇨ শিশুর অধিকার: কিছু দেশে জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব না দেওয়া শিশুর বৈধ অধিকার সীমিত করতে পারে।
⇨ আর্থ-রাজনৈতিক প্রভাব: জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব না দেওয়ার নীতি দেশগুলোর রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সব দেশে জন্মলগ্নেই নাগরিকত্ব পাওয়া যায় না। জার্মানি, জাপান, ইতালি, ভারত, চীন, ভুটান ইত্যাদি দেশ পিতামাতার নাগরিকত্বের ওপর নির্ভর করে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা ব্রাজিলের মতো দেশগুলো জন্মলগ্নে নাগরিকত্ব দেয়, তবে শর্তসাপেক্ষে।
সংক্ষেপে নাগরিকত্ব জন্মের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসে না; এটি আইনি, সামাজিক ও রাজনৈতিক নিয়মের ফলাফল। দেশের নীতি, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধি এবং জাতীয়তাবাদ all মিলিয়ে নাগরিকত্বের বাস্তবতা নির্ধারিত হয়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।