প্রযুক্তির অহংকার ভেঙে দিল এক ক্ষেপণাস্ত্র-ভূপাতিত বিশ্বের প্রথম স্টেলথ জেট

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
২৭ মার্চ ১৯৯৯। কসোভো যুদ্ধ তখন তুঙ্গে। ন্যাটোর অসংখ্য যুদ্ধবিমান সার্বিয়ার আকাশে বোমা বর্ষণ করছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আধুনিক স্টেলথ বোমারু বিমান এফ-১১৭ নাইটহক যেন ছিল অদৃশ্য ছায়া-রাডারে ধরা পড়ে না, মিসাইলও তাকে স্পর্শ করতে পারছে না। অথচ সেদিন সন্ধ্যায় ঘটল এক ঐতিহাসিক ঘটনা-যা বদলে দিল আধুনিক যুদ্ধকৌশলের ধারা।
যুগোস্লাভিয়ার গোপন রণকৌশল
ন্যাটোর শক্তি ও প্রযুক্তির সামনে দুর্বল মনে হলেও যুগোস্লাভিয়ান এয়ার ডিফেন্স ব্রিগেড কিন্তু বসে থাকেনি। তাদের হাতে ছিল সোভিয়েত আমলের পুরোনো S-125 Neva (SA-3 Goa) মিসাইল সিস্টেম। এই প্রযুক্তি আদতে ষাটের দশকের-কিন্তু দক্ষ নেতৃত্ব আর অভিনব কৌশল দিয়েই সেটি পরিণত হয় এক মারাত্মক অস্ত্রে।
সেদিন দায়িত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোতান ড্যানি। তিনি বুঝেছিলেন-নিয়ম ভেঙে সাহসী কৌশলই পারে শত্রুর আধুনিক বিমানকে মাটিতে নামাতে। তার নেতৃত্বেই শুরু হয় এক অভিনব খেলা-
⇨ রাডার সর্বোচ্চ ২০ সেকেন্ড চালু রাখা
⇨ প্রতিবার ফায়ারের পরপরই লঞ্চার সরিয়ে ফেলা
⇨ পুরোনো মিগ-২১ বিমানকে ব্যবহার করা ডিকয় হিসেবে, যাতে ন্যাটোর এন্টি-রেডিয়েশন মিসাইল ভ্রান্ত হয়।
এই বুদ্ধিমত্তার কারণেই তার ইউনিটকে বলা হয় "ইউরোপের ইতিহাসে সেরা এয়ার ডিফেন্ডার।"
স্টেলথ প্রযুক্তির রহস্য
লকহিড করপোরেশনের তৈরি এফ-১১৭ নাইটহক ছিল বিশ্বের প্রথম অপারেশনাল স্টেলথ বিমান। এর বিশেষ আকৃতি আর রাডার-শোষণকারী কোটিং শত্রুর নজর এড়িয়ে যেত। তবে বাস্তব সত্য হলো-স্টেলথ মানে অদৃশ্য নয়, বরং "কম শনাক্তযোগ্য" (Less Detectable)। ঠিক সেই দুর্বলতাকেই কাজে লাগান ড্যানি।
সেই রাতের ঘটনা
সেদিন সন্ধ্যায় ইতালি থেকে উড্ডয়ন করে চারটি এফ-১১৭। সার্বিয়ান গোয়েন্দারা খবর পাঠায় সঙ্গে সঙ্গেই। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে যুগোস্লাভিয়ান পি-১৮ রাডারে ধরা পড়ে অচেনা চারটি সিগন্যাল। ড্যানি বুঝে যান-এটাই সেই বহুল আলোচিত স্টেলথ।
প্রথম মিসাইল ব্যর্থ হয়। কিন্তু দ্বিতীয় মিসাইল আকাশ ছিঁড়ে ধেয়ে গিয়ে বিস্ফোরিত হয় বিমানের পাশেই। মুহূর্তেই ইতিহাস রচিত হয়-পৃথিবীর প্রথম স্টেলথ বিমান আকাশে ভূপাতিত হলো।
পাইলট লেফটেন্যান্ট কর্নেল ড্যারেল জেলকো প্রাণে বেঁচে যান, তবে তাকে ৮ ঘণ্টা ধরে শত্রুর হাত থেকে এড়িয়ে গোপন অভিযানে উদ্ধার করতে হয়।
ধ্বংসাবশেষ নিয়ে রহস্য
ঘটনার পর প্রশ্ন ওঠে-এত গোপন প্রযুক্তির বিমানের ধ্বংসাবশেষ কেন ন্যাটো ধ্বংস করে দিল না? মার্কিন জেনারেলরা বলেন, এফ-১১৭ এর প্রযুক্তি তখনকার দিনে '৭০-এর দশকের, তাই ভয় ছিল কম। তবে গুজব আছে, বিমানের অংশ চীন ও রাশিয়ার হাতে পৌঁছে যায়। আজও সেই ধ্বংসাবশেষ বেলগ্রেডের এভিয়েশন মিউজিয়ামে সংরক্ষিত।
যুদ্ধোত্তর প্রভাব
এই ঘটনা শুধু একটি বিমানের পতন নয়, বরং প্রমাণ করে যে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তি নয়, সঠিক কৌশল ও প্রস্তুতিই শেষ কথা। মার্কিন বিমানবাহিনী ২০০৮ সালে এফ-১১৭ পুরোপুরি অবসরে পাঠায়। তার উত্তরসূরি বি-২ বোম্বার ও এফ-২২ ফাইটার এখনও কার্যকর থাকলেও, কসোভোর আকাশে ভূপাতিত এফ-১১৭ ইতিহাসে এক অনন্য শিক্ষা দিয়ে গেছে।আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।