সার্চ ইঞ্জিনে আমূল পরিবর্তন আনছে জেনারেটিভ এআই এবং জিইও

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
সার্চ ইঞ্জিনের ভবিষ্যৎ বদলে দিচ্ছে জেনারেটিভ এআই এবং জিইও। প্রচলিত এসইওর ভিত্তি অটুট থাকলেও, জিইও নিশ্চিত করছে জেনারেটিভ সার্চে কাঠামোগত ও বিশ্বাসযোগ্য কনটেন্টের দৃশ্যমানতা। জানুন কিভাবে জেনারেটিভ এআই ও জিইও তথ্য অনুসন্ধানে আমূল পরিবর্তন আনছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশে একদিকে যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন শাখা জেনারেটিভ এআই (Generative AI) আমাদের সামনে অসীম সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে, অন্যদিকে তথ্য অনুসন্ধানের প্রচলিত কৌশল এসইও (SEO-Search Engine Optimization) নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে। বর্তমানে এর একটি বিবর্তিত রূপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে জিইও (GEO-Generative Engine Optimization), যা আগামী দিনের তথ্য অনুসন্ধান (Search) ও দৃশ্যমানতার (Visibility) প্রধান ভিত্তি হয়ে উঠছে।
বিগত দুই দশক ধরে সার্চ ইঞ্জিনে তথ্য দৃশ্যমানতা ও তথ্য প্রচারে (SEO) এসইও-ই ছিল প্রধান হাতিয়ার। এটি মূলত দুটি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রযুক্তিগতভাবে একটি সাইটকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হয় যাতে কম্পিউটার বা সার্চ ইঞ্জিন সহজে সেটিকে বুঝতে পারে; এর মধ্যে কোড, স্কিমা, মেটাডেটা, মোবাইল-ফ্রেন্ডলি কাঠামো ও সাইটের গতি অন্যতম। অন্যদিকে সামনের দিকটি নির্ভর করে এমন কনটেন্ট তৈরির ওপর, যা পাঠকের কাছে মূল্যবান, স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য।
এসইও কেবল সার্চ রেজাল্টে উচ্চ র্যাংক পাওয়ার মাধ্যম ছিল না; বরং এটি সবসময়ই ছিল প্রযুক্তিগত ভিত্তি ও ব্যবহারকারী অভিজ্ঞতার সমন্বয়। আজও সেই মৌলিকতা অটুট রয়েছে। প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সার্চ ইঞ্জিনের অভিজ্ঞতাও বদলাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা এখন আর লিঙ্কের তালিকা দেখতে চান না; বরং তারা সরাসরি নির্ভুল উত্তর চান। যার ফলে জিইও এবং জেনারেটিভ এআই ধারণা আলোচিত হচ্ছে।
GEO আসলে SEO-এর পরবর্তী ধাপ, যা জেনারেটিভ সার্চ সিস্টেম, যেমন ChatGPT, Gemini, Claude বা Perplexity এর জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। এই ইঞ্জিনগুলো ব্যবহারকারীর প্রশ্নের ভিত্তিতে সংক্ষিপ্ত, প্রাসঙ্গিক এবং নির্ভরযোগ্য উত্তর তৈরি করে এবং সেই উত্তরে ব্যবহৃত উৎসগুলোকেও তুলে ধরে। GEO-এর মূল উদ্দেশ্য হলো কনটেন্টকে এমনভাবে গঠন করা যাতে তা কাঠামোগত, স্বচ্ছ, অথরিটেটিভ এবং নির্ভরযোগ্য হয়, ফলে জেনারেটিভ ইঞ্জিন সহজেই সেটিকে উত্তরের অংশ হিসেবে বেছে নেয়।
এখানে সরাসরি উত্তর প্রদান, জিজ্ঞাসিত বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা তুলে ধরা, স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং ডোমেইন অথরিটি বৃদ্ধি, এসব কিছুই গুরুত্বপূর্ণ। SEO এবং GEO কে পুরোপুরি আলাদা হিসেবে নয়, বরং একটি ধারাবাহিক বিবর্তনের অংশ হিসেবে দেখা উচিত। SEO একটি সাইটকে প্রযুক্তিগতভাবে সুদৃঢ় করে এবং ব্যবহারকারীর জন্য মূল্যবান কনটেন্ট তৈরি করে আর GEO সেই ভিত্তিকে পরবর্তী প্রজন্মের জেনারেটিভ সার্চে কার্যকরভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরে।
জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি বিশাল ডেটাসেট থেকে প্যাটার্ন ও কাঠামো ব্যবহার করে সম্পূর্ণ নতুন ও মৌলিক কনটেন্ট তৈরি করতে পারে। এটি কেবল টেক্সট নয়, ছবি, ভিডিও, সঙ্গীত এমনকি প্রোগ্রামিং কোডও তৈরি করতে সক্ষম। ডিপ লার্নিং ও ট্রান্সফরমার-ভিত্তিক মডেলের কারণে এর আউটপুট এখন মানুষের তৈরি কনটেন্টের কাছাকাছি মান বজায় রাখছে।
এই প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষা, গবেষণা, ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা ও বিনোদনসহ প্রায় প্রতিটি খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় সহজে পড়াশোনা করতে পারছে, প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন পণ্যের ধারণা তৈরি করছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন ওষুধ আবিষ্কার ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং শিল্পকলা নতুন মাত্রা পাচ্ছে। এর ফলে জেনারেটিভ এআইকে শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, বরং এক বিপ্লবাত্মক রূপান্তরের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জেনারেটিভ এআই তথ্য ও ওয়েব সার্চের জগতে নতুন বিপ্লব এনেছে। এসইও এখনও প্রাসঙ্গিক, তবে জিও হলো তার বিবর্তিত রূপ, যা নতুন ওয়েব সার্চে সাফল্যের পথ খুলে দিচ্ছে। সার্চ ইঞ্জিনের পরবর্তী যুগে সফল হতে হলে SEO ও GEO, দুটিকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করতে হবে। কারণ আগামী দিনের প্রতিযোগিতা কেবল জিজ্ঞাসিত লিংকের তালিকা প্রদর্শন করা নয়, বরং সরাসরি উত্তরের নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে ওঠার লড়াই।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।