পোস্টমডার্ন বোঝা কি আসলেই কঠিন? এখনই পরীক্ষা করুন আপনার IQ এবং অভ্যাস!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
পোস্টমডার্ন সাহিত্য-যা ২০তম শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছে-মূলত ন্যারেটিভের ভাঙন, সময় ও বাস্তবতার ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা, এবং অর্থের বহুস্তরীয়তার জন্য পরিচিত। এটি পাঠককে চ্যালেঞ্জ করে, পরিচিত কাঠামোর বাইরে চিন্তা করতে বাধ্য করে। অনেকেই মনে করেন, যে ব্যক্তি পোস্টমডার্ন সাহিত্য বোঝে, তাকে "উচ্চ বুদ্ধিমত্তার" মানুষ ধরা যায়। কিন্তু বাস্তবে কি এটি সত্য?
সাহিত্য, মনস্তত্ত্ব এবং স্নায়ুবিজ্ঞান অনুযায়ী, পোস্টমডার্ন বই বোঝা কেবল বুদ্ধিমত্তার মাপকাঠি নয়। এটি মূলত একটি সংকর ফ্যাক্টর-যেখানে ধৈর্য, সাংস্কৃতিক জ্ঞান, অভ্যাস, এবং বিশ্লেষণশক্তি একসাথে কাজ করে।
বুদ্ধিমত্তা বনাম অভ্যাস:
বুদ্ধিমত্তা (IQ): বুদ্ধিমত্তা মানে দ্রুত যুক্তি খুঁজে বের করার ক্ষমতা, সমস্যা সমাধান, এবং জটিল ধারণা বোঝার ক্ষমতা। কেউ উচ্চ IQ থাকলেও পোস্টমডার্ন বইয়ে ডুব দিতে কষ্ট পেতে পারে, কারণ তার অভ্যাস বা সাংস্কৃতিক রেফারেন্সের অভাব থাকতে পারে।
অভ্যাস ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট: পোস্টমডার্ন সাহিত্যে প্রায়শই ঐতিহাসিক, দার্শনিক, এবং সাহিত্যিক রেফারেন্স থাকে। যিনি দীর্ঘদিন বিভিন্ন ধরণের সাহিত্য, দর্শন, সিনেমা, এবং সমাজবিজ্ঞান অনুধাবন করেছেন, তিনি সহজে অর্থ খুঁজে বের করতে পারেন।
অর্থাৎ, এটি বুদ্ধিমত্তার চেয়ে সংস্কৃতি ও অভ্যাসের প্রভাব বেশি।
মনস্তত্ত্বের গবেষণা বলছে-
জটিল সাহিত্য পড়ার সময় কগনিটিভ ফ্লেক্সিবিলিটি (Cognitive Flexibility) ও হাই লেভেল রিজনিং সক্রিয় হয়। মস্তিষ্ক একসাথে ব্যাখ্যা, অনুমান, এবং প্রতীক বিশ্লেষণ করতে থাকে।
এটি শুধুই IQ-এর পরীক্ষা নয়; বরং এটি ধৈর্য, মনোযোগ, এবং কনটেক্সচুয়াল জ্ঞানের মিশ্রণ।
পোস্টমডার্ন বোঝার চ্যালেঞ্জ:
⇨ ভাঙা ন্যারেটিভ: গল্প একসাথে শুরু হয় না, বিভিন্ন সময় ও ভিন্ন ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে ঘটনাগুলো ঘটে।
⇨ অসংগত বা বহু অর্থযুক্ত সংলাপ: পাঠককে নিজের অর্থ তৈরি করতে হয়।
⇨ সাংস্কৃতিক রেফারেন্স: ইতিহাস, ফিলোসফি, অন্যান্য সাহিত্য জানতে হলে বোঝা সহজ হয়।
এগুলো বোঝা কোনো মানুষের বুদ্ধিমত্তা নির্দেশ করে না, বরং তার পাঠ অভ্যাস, জ্ঞানভাণ্ডার, এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতা নির্দেশ করে।
বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষণীয় দিক:
⇨ নিউরোসায়েন্স: গবেষণায় দেখা গেছে, জটিল সাহিত্য পড়ার সময় মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স এবং কগনিটিভ নেটওয়ার্ক সক্রিয় থাকে।
⇨ মনস্তত্ত্ব: অর্থ বের করার জন্য বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতে হয়, যা ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়। তবে, এই দক্ষতা বিকাশ হয় পাঠ অভ্যাস এবং জ্ঞানভাণ্ডারের ওপর, শুধু IQ নয়।
পোস্টমডার্ন সাহিত্য বোঝা একজন ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তার একমাত্র মানদণ্ড নয়।
এটি বোঝার জন্য প্রয়োজন- অভ্যাস, পাঠচর্চা, সাংস্কৃতিক জ্ঞান, ধৈর্য এবং মনোযোগ, বিশ্লেষণশীলতা ও সৃজনশীল চিন্তা। যারা বোঝে না, তার মানে এই নয় যে সে কম বুদ্ধিমান; বরং অভ্যাস বা প্রেক্ষাপট কম হতে পারে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।