আপনি কি ভবিষ্যতে ভ্রমণ করতে চাইবেন?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
সময় ভ্রমণ বা টাইম ট্রাভেল (Time Travel)-শুধু উপন্যাস, সিনেমা আর কল্পবিজ্ঞানের জগতে নয়, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাতেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। মানুষ হাজার বছর ধরে কল্পনা করেছে, যদি অতীতে ফেরা যেত বা ভবিষ্যতে উঁকি মারা যেত! কিন্তু বাস্তবে কি তা সম্ভব? বিজ্ঞানের চোখে টাইম ট্রাভেলের কিছু সম্ভাবনা আছে বটে, তবে সাথে রয়েছে জটিল সমস্যা, যেগুলো আজও সমাধানহীন।
সময় ভ্রমণের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি-
১. আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব (Theory of Relativity): আলবার্ট আইনস্টাইন দেখিয়েছিলেন, সময় কোনো স্থির বস্তু নয়, বরং আপেক্ষিক। বস্তু যত দ্রুতগতিতে চলবে, তার জন্য সময় তত ধীর হয়ে যাবে—এটিকে বলে টাইম ডাইলেশন (Time Dilation)।
উদাহরণ: যদি কেউ আলোর গতির কাছাকাছি স্পিডে মহাকাশযানে ভ্রমণ করে, তবে পৃথিবীতে থাকা মানুষের তুলনায় তার জন্য সময় অনেক ধীরে যাবে। অর্থাৎ মহাকাশচারী ফিরে এলে দেখতে পাবে পৃথিবীতে হয়তো বহু বছর কেটে গেছে, অথচ তার নিজের বয়স বেড়েছে মাত্র কয়েক বছর।
২. ব্ল্যাক হোল ও গ্রাভিটেশনাল টাইম ডাইলেশন
ব্ল্যাক হোলের আশেপাশে মহাকর্ষ এত প্রবল যে, সেখানকার সময় বাইরের তুলনায় ধীরে চলে। অর্থাৎ কোনো মহাকাশচারী যদি ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি থাকে, তার জন্য এক ঘণ্টা হতে পারে, কিন্তু দূরের পৃথিবীতে কেটে যাবে বহু বছর।
৩. ওয়ার্মহোল (Wormhole)
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বলছে, মহাবিশ্বে হয়তো এমন একধরনের টানেল বা শর্টকাট আছে—যাকে বলে ওয়ার্মহোল। এটি মহাবিশ্বের দুই বিন্দুকে যুক্ত করে রাখতে পারে। যদি এটি বাস্তবে তৈরি বা ব্যবহার করা সম্ভব হয়, তবে সময়ের মধ্যেও যাতায়াতের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
টাইম ট্রাভেলের সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা-
⇨ শক্তির সীমাবদ্ধতা: আলোর কাছাকাছি গতিতে কোনো বস্তু চালাতে গেলে অজস্র শক্তি প্রয়োজন, যা বর্তমান প্রযুক্তিতে কল্পনাতীত।
⇨ ওয়ার্মহোলের স্থায়িত্ব: ওয়ার্মহোল থাকলেও তা খুব অল্প সময়ে ধ্বংস হয়ে যায়। একে স্থায়ী রাখতে হলে 'নেগেটিভ এনার্জি' বা 'এক্সোটিক ম্যাটার' প্রয়োজন, যা এখনো বাস্তবে প্রমাণিত হয়নি।
⇨ প্যারাডক্স বা বিরোধ: সময় ভ্রমণের সবচেয়ে বড় জটিলতা হলো টাইম প্যারাডক্স। যেমন—যদি কেউ অতীতে ফিরে গিয়ে নিজের দাদাকে কোনোভাবে বাঁচতে না দেয়, তাহলে সে নিজেই জন্মাবে কীভাবে? এটিকে বলে গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স। বিজ্ঞানীরা এখনো এর যুক্তিসঙ্গত সমাধান খুঁজে পাননি।
কার্যকর প্রযুক্তির অভাব-
টাইম ট্রাভেল সম্ভব হলেও এখনো এমন কোনো প্রযুক্তি নেই যা মানুষকে আলোর গতির কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে বা ওয়ার্মহোলকে ব্যবহারযোগ্য করতে পারে।
বর্তমান গবেষণা ও দৃষ্টিভঙ্গি-
⇨ কোয়ান্টাম মেকানিক্স: ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার জগতে (subatomic world) সময় ভিন্নভাবে কাজ করে। কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে, কণা যেন সময়ের দুই দিকেই চলাচল করতে পারে। তবে এটি মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করা এখনো অসম্ভব।
⇨ থিওরেটিক্যাল মডেল: অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যতে উন্নত প্রযুক্তি হয়তো সময় ভ্রমণের কিছু দরজা খুলতে পারে, তবে অতীতে ফেরা প্রায় অসম্ভব।
⇨ বাস্তব পরীক্ষা: জিপিএস স্যাটেলাইটে থাকা ঘড়ি পৃথিবীর ঘড়ির চেয়ে সামান্য ধীরে চলে—এটি টাইম ডাইলেশনের বাস্তব প্রমাণ। যদিও এটি খুবই ক্ষুদ্র মাত্রায় ঘটে।
টাইম ট্রাভেল আজও রহস্য আর কল্পনার সীমানায় দাঁড়িয়ে আছে। আইনস্টাইনের তত্ত্ব আমাদের জানাচ্ছে, সময়কে বাঁকানো বা ধীর করা সম্ভব, কিন্তু একে বাস্তবে কাজে লাগানোর প্রযুক্তি এখনো বহুদূরে। তবে প্রতিটি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি একসময় কল্পকাহিনীকেও বাস্তব করেছে-তাই হয়তো আগামী শতকে সময় ভ্রমণ নিয়ে নতুন বিস্ময়ের দ্বার খুলে যাবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।