বহুদূরের গ্রহে পানি? বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানে চমকপ্রদ তথ্য

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
পানি জীবনের জন্য সবচেয়ে অপরিহার্য উপাদান। এতদিন মানুষ ভেবেছিল, তরল পানি কেবল পৃথিবীতেই আছে। কিন্তু আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও মহাকাশ গবেষণা দেখাচ্ছে, মহাবিশ্বে পানি একেবারেই অদ্ভুত কিছু নয়। বিভিন্ন গ্রহ, চাঁদ ও এমনকি দূরবর্তী এক্সোপ্ল্যানেটে পানির অস্তিত্বের প্রমাণ ধরা পড়ছে একের পর এক।
আমাদের সৌরজগতেই পৃথিবী ছাড়াও বেশ কিছু জায়গায় পানির অস্তিত্ব রয়েছে-
⇨ ইউরোপা (Europa): বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপার বরফে মোড়া পৃষ্ঠের নিচে রয়েছে বিশাল উপসাগরীয় সমুদ্র। ধারণা করা হয়, এ পানিতে পৃথিবীর সমুদ্রের চেয়েও দ্বিগুণ পানি থাকতে পারে।
⇨ এনসেলাডাস (Enceladus): শনি গ্রহের উপগ্রহ এনসেলাডাস থেকে গিজারের মতো বরফ ও বাষ্প নির্গত হতে দেখা গেছে। এর নিচে তরল পানির মহাসাগর থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
⇨ গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টো: বৃহস্পতির অন্য দুই উপগ্রহেও বরফের নিচে তরল পানির অস্তিত্ব অনুমান করা হয়।
⇨ মঙ্গল (Mars): মঙ্গলে প্রাচীনকালে নদী ও হ্রদের অস্তিত্ব ছিল বলে শক্ত প্রমাণ রয়েছে। আজও বরফ ও মাটির নিচে লবণাক্ত তরল পানির উপস্থিতি ধরা পড়ছে।
⇨ এক্সোপ্ল্যানেটে পানির চিহ্ন: সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলোকে বলা হয় এক্সোপ্ল্যানেট। আধুনিক টেলিস্কোপ (যেমন James Webb Space Telescope) এর মাধ্যমে এখন এক্সোপ্ল্যানেটগুলোর বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করা সম্ভব হচ্ছে। বেশ কিছু এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প (water vapor) শনাক্ত করা হয়েছে।
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো এক্সোপ্ল্যানেট K2-18b-তে জলীয় বাষ্প ধরা পড়ে, যা সম্ভাব্যভাবে জীবনের জন্য উপযুক্ত হতে পারে।
আরও কয়েকটি "সুপার-আর্থ" ও "মিনি-নেপচুন" শ্রেণীর গ্রহের বায়ুমণ্ডলে পানির উপস্থিতি ধরা পড়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, পানি থাকলেই জীবন থাকবে—এমন নিশ্চয়তা নেই। তবে তরল পানি হলো জীবনের সম্ভাব্য অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে মৌলিক শর্ত। ইউরোপা ও এনসেলাডাসের পানির নিচে জীবাণু-জাতীয় প্রাণ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্সোপ্ল্যানেটে পানি ধরা পড়া মানে সেখানে জীবনের সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বিজ্ঞানীরা আরও অবাক হয়েছেন এই কারণে যে, মহাবিশ্বে পানির অণু (H₂O) খুব সাধারণভাবে তৈরি হতে পারে। নক্ষত্র গঠনের মেঘে (interstellar clouds) পানি বরফ হিসেবে পাওয়া গেছে। ধূমকেতুতে (comets) প্রচুর পানি থাকে, যা গ্রহে পানি সরবরাহ করতে পারে। এমনকি পৃথিবীর পানির বড় অংশই হয়তো প্রাচীন ধূমকেতু বা গ্রহাণু থেকে এসেছে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, পানি কেবল পৃথিবীর সম্পদ নয়। মহাবিশ্বের অসংখ্য গ্রহ, চাঁদ ও এক্সোপ্ল্যানেটে পানির চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রশ্ন এখন একটাই-এই পানির গভীরে কি সত্যিই প্রাণ লুকিয়ে আছে?
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।