ডিপফেকের জালে ফাঁসছেন আপনি!-বাস্তব আর জাল এখন আলাদা করা কঠিন

ডিপফেকের জালে ফাঁসছেন আপনি!-বাস্তব আর জাল এখন আলাদা করা কঠিন
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বর্তমান সময়ে ডিপফেক (Deepfake) প্রযুক্তি শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত কৃতিত্ব নয়, এটি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলছে। ডিপফেক হলো AI ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে ভিডিও, ছবি বা অডিওকে এমনভাবে পরিবর্তন করা যাতে এটি বাস্তবের সঙ্গে অবিশ্বাস্যভাবে মিলে যায়।

ডিপফেক কীভাবে কাজ করে?

ডিপফেক মূলত GANs (Generative Adversarial Networks) ব্যবহার করে তৈরি হয়। এখানে দুটি AI মডেল পরস্পরের বিপরীতে কাজ করে:

⇨ জেনারেটর (Generator): নতুন ভিডিও বা ছবি তৈরি করে।

⇨ ডিসক্রিমিনেটর (Discriminator): তা পরীক্ষা করে, এটি বাস্তবসম্মত কিনা।
 

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মডেল ক্রমশ এতোটাই নিখুঁত হয় যে, চোখ বা সাধারণ প্রযুক্তি দিয়ে তা সত্য ও মিথ্যা আলাদা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়।
 

ডিপফেকের ব্যবহার

⇨ বিনোদন ও সিনেমা: মৃত অভিনেতার চরিত্র পুনরায় তৈরি বা ভিন্ন ভাষায় ডাবিং।

⇨ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের "বক্তৃতা" প্রদর্শন।

⇨ বিপজ্জনক ব্যবহার: রাজনৈতিক নেতার ভুয়া বক্তব্য, সামাজিক বিভ্রান্তি, বা ব্ল্যাকমেইল।
 

আন্তর্জাতিক উদাহরণ

⇨ রাজনৈতিক প্রভাব: ২০২০ সালের নির্বাচনের সময় আমেরিকায় কয়েকটি ডিপফেক ভিডিও ছড়ানো হয়েছিল, যা নির্বাচনী প্রচারণায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছিল।

⇨সেলিব্রিটি স্ক্যান্ডাল: বহু পরিচিত ব্যক্তির ছবি ও ভিডিওকে বদলে, ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে যা তাদের মানহানি করেছে।

⇨ সাইবারক্রাইম ও প্রতারণা: ব্যাংক বা কর্পোরেট সংস্থার নির্বাহীর ভুয়া ভিডিও ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা রেকর্ডে আছে।
 

বিপদ ও প্রভাব

⇨ সত্য ও মিথ্যার বিভ্রান্তি: মানুষ কাকে বিশ্বাস করবে তা বোঝা কঠিন।

⇨ মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি: ব্যক্তিগত জীবনে মানহানি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।

⇨ রাজনৈতিক অস্থিরতা: রাষ্ট্র নেতাদের নাম ব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়ানো।

⇨ আইনি চ্যালেঞ্জ: আইন এবং প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তিত হলেও ডিপফেক শনাক্ত ও দমন করা এখনও কঠিন।
 

মোকাবেলার উপায়

⇨AI-ভিত্তিক ডিটেকশন: Deepware Scanner, Reality Defender এর মতো টুলস।

⇨ জনসচেতনতা: মানুষকে শেখানো কিভাবে ভিডিও বা ছবি যাচাই করা যায়।

⇨ আইনগত নিয়ন্ত্রণ: দেশভিত্তিক বা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ফেক কনটেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা।

⇨ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি: AI নিজেই শিখছে ডিপফেক শনাক্ত করতে, যা ভবিষ্যতে বিপদ কমাবে।
 

গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ মিনিটের ডিপফেক ভিডিও তৈরি করতে কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন সময় লাগে, কিন্তু এটি চোখে প্রায় নির্ভুল।
AI গবেষকরা বর্তমানে এমন মডেল তৈরি করছেন যা ডিপফেক শনাক্ত করতে ৯৫% সফলতা দেখাচ্ছে।

বিনোদন ও শিক্ষামূলক কাজে ব্যবহার করলে ডিপফেক ইতিহাস ও শিক্ষাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে।
 

ডিপফেক প্রযুক্তি শিক্ষণীয় এবং বিনোদনমূলক সম্ভাবনার সঙ্গে এসেছে, তবে মানবজীবন, সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে। সচেতন ব্যবহার, প্রযুক্তিগত উন্নতি এবং আইনি নিয়ন্ত্রণ মিলিয়ে একমাত্র এটি নিরাপদভাবে ব্যবহারের পথ খুলে দিতে পারে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ