সহমর্মিতার ছোঁয়াতেই কি তবে খুলে যেতে পারে অটিজমের নতুন দিগন্ত!!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD)-এটি এক ধরনের স্নায়ুবিকাশজনিত অবস্থা, যা জন্মের পর থেকেই মস্তিষ্কের যোগাযোগ ও সামাজিক আচরণকে প্রভাবিত করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রতি ১০০ জন শিশুর মধ্যে প্রায় একজনের অটিজম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশেও এই সংখ্যা ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে, যদিও সঠিক জরিপ ও শনাক্তকরণের অভাবে প্রকৃত পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন।
অটিজম আসলে কী?
অটিজম কোনো সংক্রামক রোগ নয়, এটি এমন একটি বিকাশজনিত পার্থক্য যেখানে ব্যক্তি তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, ভাষা, আবেগ ও সামাজিক ইঙ্গিত বোঝার ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে কাজ করে। তাই এটিকে "অসুখ" বা "অক্ষমতা" হিসেবে দেখা নয়, বরং "ভিন্ন সক্ষমতা" হিসেবে বোঝা জরুরি।
চিকিৎসা গবেষণা বলছে, অটিজমের প্রধান কারণ জিনগত প্রভাব। যদি পরিবারের কারও মধ্যে অটিজম থাকে, তবে সন্তানের মধ্যে ঝুঁকি বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্যের কিছু জটিলতা, জন্মের সময় অক্সিজেনের ঘাটতি বা পরিবেশগত কিছু প্রভাবও ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো একক কারণ চিহ্নিত হয়নি।
প্রধান লক্ষণসমূহ:
⇨ সামাজিক যোগাযোগে অসুবিধা (চোখে চোখ রেখে কথা না বলা, ইঙ্গিত বুঝতে না পারা)
⇨ ভাষা ও বাকশক্তির বিলম্ব বা ভিন্নতা
⇨ পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ (যেমন-একই শব্দ বা কাজ বারবার করা)
⇨ শব্দ, আলো বা স্পর্শে অতিসংবেদনশীলতা
⇨ পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে অসুবিধা
উল্লেখযোগ্য যে, এই লক্ষণগুলো সবার মধ্যে সমানভাবে দেখা যায় না-তাই একে "স্পেকট্রাম" বলা হয়।
বিকশিত দেশে অটিজম শনাক্ত ও সহায়তার জন্য বিশেষ স্কুল, থেরাপি সেন্টার ও প্রশিক্ষিত পেশাদারের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশে গত এক দশকে সচেতনতা বাড়লেও, এখনও গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভুল ধারণা ব্যাপক। অনেকে এটিকে মানসিক রোগ, জাদুবিদ্যা বা অভিশাপ মনে করেন-যা আক্রান্ত পরিবারকে আরও একাকী করে দেয়।
সহায়তার উপায়:
অটিজমের কোনো "চিকিৎসা" নেই, তবে সঠিক থেরাপি ও সহায়তা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনমান উন্নত করতে পারে।
⇨ ভাষা থেরাপি: কথা বলা ও বোঝার ক্ষমতা বাড়ায়
⇨ আচরণগত থেরাপি: সামাজিক আচরণ ও দৈনন্দিন দক্ষতা শেখায়
⇨ বিশেষ শিক্ষা: ব্যক্তির প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠক্রম সাজানো
⇨ পারিবারিক সহায়তা: পরিবারের মানসিক সমর্থন ও ধৈর্য
সচেতনতার প্রয়োজন কেন?
ভুল ধারণা ভাঙতে এবং আক্রান্তদের প্রতি সহানুভূতি গড়ে তুলতে সচেতনতা অপরিহার্য। অটিজম আক্রান্ত শিশু কোনো "বোঝা" নয়—বরং সঠিক পরিবেশে তারা শিল্প, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এমনকি উদ্যোক্তা হিসেবেও সাফল্য পেতে পারে।
অটিজম নিয়ে ভয় নয়, বোঝাপড়া বাড়ানোই সবচেয়ে জরুরি। প্রতিটি মানুষই ভিন্ন, আর এই ভিন্নতার মধ্যেই মানবজীবনের রঙিন বৈচিত্র্য লুকিয়ে আছে। সমাজ যদি সহানুভূতি, বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান ও সহযোগিতার হাত বাড়ায়-তাহলেই অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরাও পূর্ণতা পাবে জীবনে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।