দারুণ স্বাদ কিন্তু আছে কি পর্যাপ্ত পুষ্টি? জেনে নিন প্যাকেটজাত ফল জুসের বাস্তবতা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
গরমের দিনে প্যাকেটজাত ফলের জুস আমাদেরকে প্রলুব্ধ করে। সুপারমার্কেটের শেলফে সাজানো রঙিন বোতলগুলোতে লেখা থাকে "100% ফল" বা "ভিটামিন সমৃদ্ধ।" কিন্তু বৈজ্ঞানিক তথ্য বলে, প্যাকেটজাত জুসে প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং চিনি সংযোজনের কারণে প্রাকৃতিক পুষ্টির বড় অংশ নষ্ট হয়ে যায়।
প্যাকেটজাত জুসের পুষ্টির বাস্তবতা-
☞ প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রভাব: জুসকে দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের জন্য উষ্ণতায় প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
এই প্রক্রিয়ায় ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের ২০–৫০% পর্যন্ত হারিয়ে যেতে পারে।
☞ চিনি সংযোজনের ঝুঁকি: প্রায়শই স্বাদ বাড়াতে অতিরিক্ত চিনি যুক্ত করা হয়। গবেষণা দেখায়, এক গ্লাস প্যাকেটজাত জুসে প্রায় ২০–৩০ গ্রাম অতিরিক্ত চিনি থাকতে পারে, যা প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক সীমার প্রায় অর্ধেক। দীর্ঘমেয়াদি খেলে ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
☞ ফাইবারের অভাব: পুরো ফলের তুলনায় প্যাকেটজাত জুসে প্রায় কোনও ফাইবার থাকে না।
ফাইবার কম থাকায় হজম দ্রুত হয়, রক্তের শর্করা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘমেয়াদে অন্ত্র স্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়ে।
☞ খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষতি: প্রক্রিয়াজাতকরণের কারণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অন্যান্য খনিজের মাত্রা কমে যায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাব দেহের কোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করতে পারে না।
পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের প্রভাব:
⇨ দ্রুত হজম: রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
⇨ ডায়াবেটিস ও ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত চিনি ও কম ফাইবার দেহে ঝুঁকি তৈরি করে।
⇨ কম সম্পূর্ণ পুষ্টি: খনিজ ও ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে।
প্যাকেটজাত জুসের জনপ্রিয় কারণ-
⇨ সহজ ও দ্রুত পরিবেশনযোগ্য।
⇨ দীর্ঘ সময় সংরক্ষণযোগ্য।
⇨ রঙ, স্বাদ ও প্যাকেজিং শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের আকর্ষণ করে।
তবে স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে ঘরে তৈরি ফ্রেশ জুস বা পুরো ফল সবসময় ভালো।
বৈজ্ঞানিক পরামর্শ:
⇨ দৈনিক মাত্রা সীমিত করুন: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এক গ্লাস (২০০ মিলি) যথেষ্ট।
⇨ লেবেল যাচাই করুন: চিনি সংযোজন আছে কি না দেখুন।
⇨ ফাইবার ও পুষ্টি বাড়ান: সম্ভব হলে জুসের সঙ্গে ফলের ছোট টুকরা খাওয়া ভালো।
⇨ প্রস্তুতি ঘরে করুন: ব্লেন্ডার বা প্রেসড জুসে প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজ থাকে।
গবেষণা ও পরিসংখ্যান:
এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্যাকেটজাত জুসের ভিটামিন সি মাত্রা প্রায় ৩০% কম থাকে। অন্য সমীক্ষায়, দৈনিক ১ গ্লাস জুসের সঙ্গে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ প্রাপ্তবয়স্কদের রক্তে গ্লুকোজের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায়।
শিশুদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার শিশুদের ফাইবার ও খনিজ গ্রহণ কমিয়ে দেয়, যা পাচনতন্ত্র ও হাড়ের বিকাশে প্রভাব ফেলে।
প্যাকেটজাত ফলের জুস স্বাদ ও আরাম দিয়ে থাকে, কিন্তু প্রাকৃতিক পুষ্টিতে কম। সচেতনভাবে নির্বাচন, সীমিত পরিমাণ এবং ঘরে তৈরি জুস স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।