একটি ছোট্ট অভ্যাস, যা মস্তিষ্ক ও হৃদয় উভয়কে পাল্টে দিচ্ছে-জানুন কৃতজ্ঞতার বৈজ্ঞানিক রহস্য

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
প্রতিদিনের জীবনে কৃতজ্ঞতার অনুভূতি-হয়তো কারও হাসি, কারও সহায়তা, বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মুহূর্ত-আমাদের মনে ভালো লাগা জাগায়। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, কৃতজ্ঞতা শুধু মনকে নয়, বরং শরীর ও মস্তিষ্ককেও গভীরভাবে বদলে দেয়। এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং এমনকি আমাদের সামাজিক সম্পর্কের মান উন্নত করার এক শক্তিশালী হাতিয়ার।
মস্তিষ্কে কৃতজ্ঞতার প্রভাব: ব্রেইন ইমেজিং (MRI, fMRI) ব্যবহার করে করা গবেষণায় (Fox et al., 2015; Kini et al., 2016) দেখা গেছে-
⇨ মেডিয়াল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স সক্রিয় হয়, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নৈতিক মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ।
⇨ অ্যান্টেরিয়র সিংগুলেট কর্টেক্স সক্রিয় হয়, যা সহানুভূতি, আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক বন্ধনে ভূমিকা রাখে।
⇨ ভেন্ট্রাল স্ট্রিয়াটাম সক্রিয় হয়, যা পুরস্কার ও আনন্দের অনুভূতি জাগায়।
ফলাফল: মস্তিষ্কের এই সক্রিয় অঞ্চলগুলো আমাদের আরও সহানুভূতিশীল, ন্যায়পরায়ণ ও ইতিবাচক করে তোলে।
উপকারিতা:
➤ হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস (Mills et al., 2015)
⇨ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে
⇨ হার্ট রেট ভ্যারিয়েবিলিটি উন্নত হয়
⇨ ধমনীর প্রদাহ কমে যায়
➤ প্রদাহ ও স্ট্রেস হরমোন কমানো
⇨ কর্টিসল মাত্রা হ্রাস
⇨ ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি
➤শারীরিক সহ্যক্ষমতা বৃদ্ধি
⇨ ব্যায়াম বা শারীরিক কাজে স্থায়িত্ব বৃদ্ধি
⇨ ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমে উপসর্গ হ্রাস
মানসিক স্বাস্থ্যে ভূমিকা:
⇨ ডিপ্রেশন কমানো: দৈনিক কৃতজ্ঞতার চর্চা হতাশার লক্ষণ ২৫–৩০% কমাতে পারে।
⇨ উদ্বেগ হ্রাস : প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়ে মন শান্ত রাখে।
⇨ পজিটিভ মাইন্ডসেট : দীর্ঘমেয়াদি সুখের অনুভূতি তৈরি হয়, যা পরিস্থিতি বদলালেও স্থায়ী থাকে।
কৃতজ্ঞতা অন্যের প্রতি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্বাস বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা দাম্পত্য সম্পর্কে সন্তুষ্টি ২০% পর্যন্ত বাড়াতে পারে। কর্মক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা চর্চা দলের পারফরম্যান্স ও মনোবল উন্নত করে।
প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকরা কৃতজ্ঞতাকে নৈতিক গুণ হিসেবে বর্ণনা করতেন। বৌদ্ধধর্মে 'কৃতজ্ঞ মন' ধ্যানের একটি মূল উপাদান। নেটিভ আমেরিকান সংস্কৃতিতে প্রতিদিনের শুরুতে প্রাকৃতিক শক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর প্রথা ছিল।
সহজ উপায়ে কৃতজ্ঞতার অভ্যাস গড়ে তোলা-
⇨ Gratitude Journal : প্রতিদিন অন্তত তিনটি বিষয় লিখুন, যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ।
⇨ Verbal Gratitude : কাউকে সরাসরি ধন্যবাদ জানান।
⇨ Mindful Reflection : দিনের শেষে কৃতজ্ঞতার মুহূর্তগুলো নিয়ে ভাবুন।
⇨ Letter of Gratitude: প্রিয়জনকে কৃতজ্ঞতার চিঠি লিখুন।
কৃতজ্ঞতা একটি সহজ অভ্যাস, কিন্তু এর প্রভাব গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী। এটি মস্তিষ্ককে ইতিবাচকভাবে বদলে দেয়, হৃদয়কে সুরক্ষিত রাখে এবং জীবনের গুণগত মান উন্নত করে। বিজ্ঞান স্পষ্টভাবে বলছে-আপনি যত বেশি কৃতজ্ঞ হবেন, তত বেশি আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী হবেন।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।