পলিহাউসে স্ট্রবেরি চাষ: প্রযুক্তি আর পরিকল্পনায় বদলে যাচ্ছে ফলের খামারের চেহারা

পলিহাউসে স্ট্রবেরি চাষ: প্রযুক্তি আর পরিকল্পনায় বদলে যাচ্ছে ফলের খামারের চেহারা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনের ধারা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং কৃষি জমির সংকট-এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেই আধুনিক প্রযুক্তি নতুন সমাধান দিচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো পলিহাউস প্রযুক্তি, যা শীতপ্রধান দেশের ফল স্ট্রবেরিকে বাংলাদেশের মতো উষ্ণ আবহাওয়ায় সারা বছর চাষের সুযোগ এনে দিয়েছে।

পলিহাউস প্রযুক্তি কী এবং কেন প্রয়োজনীয়?

পলিহাউস হলো প্লাস্টিক, পলিথিন শীট বা গ্লাস দিয়ে তৈরি একটি আবদ্ধ কাঠামো, যার ভেতরে গাছের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

এতে থাকে-

⇨ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা(ফ্যান, হিটার বা ন্যাচারাল ভেন্টিলেশন)

⇨ আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ (মিস্টিং সিস্টেম বা ড্রিপ ইরিগেশন)

⇨ আলো নিয়ন্ত্রণ(UV ফিল্টারযুক্ত শীট)

⇨ পোকা-মাকড় প্রতিরোধ (ইনসেক্ট নেট)

বাংলাদেশে খোলা মাঠে স্ট্রবেরি চাষ শুধু শীত মৌসুমেই সম্ভব, কিন্তু পলিহাউসে ২৫–৩০°C তাপমাত্রা ও ৬০–৭৫% আর্দ্রতা বজায় রেখে সারাবছর উৎপাদন করা যায়।
 

স্ট্রবেরি চাষের ধাপসমূহ (পলিহাউসে):

⇨ প্রজাতি নির্বাচন: চ্যান্ডলার, ক্যামারোসা, ফেস্টিভাল, সুইট চার্লি—এ ধরনের দ্রুত ফলনশীল ও তাপ সহনশীল জাত ব্যবহার হয়।

⇨ মাটি প্রস্তুতি: পলিহাউসে সাধারণত কোকোপিট, পার্লাইট ও ভার্মিকম্পোস্ট মিশ্রিত মিডিয়াম ব্যবহার করা হয়, যাতে রোগের ঝুঁকি কমে।

⇨ সেচ ব্যবস্থা:  ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেমে পানির সাথে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টি (NPK, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম) সরবরাহ করা হয়।

⇨ পরাগায়ন: মৌমাছি বা হাতে ব্রাশ দিয়ে পরাগায়ন করানো হয়, কারণ পলিহাউসে প্রাকৃতিক বাতাস কম প্রবেশ করে।

⇨ রোগ ও পোকা নিয়ন্ত্রণ: বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল (ট্রাইকোডার্মা, ব্যাসিলাস সাবটিলিস) ব্যবহৃত হয়।
 

পলিহাউসে চাষকৃত স্ট্রবেরির গুণমান সাধারণত বেশি হয়, কারণ-

⇨  সূর্যালোক নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় ফলের ⇨ অ্যান্থোসায়ানিন  মাত্রা বেশি থাকে, যা রঙ ও স্বাদ উন্নত করে।

⇨  স্ট্রবেরিতে ভিটামিন সি ১৫–২০% বেশি থাকে খোলা মাঠের তুলনায়।

⇨ রোগের চাপ কম থাকায় কীটনাশক ব্যবহার প্রায় ৫০% কমে।
 

অর্থনৈতিক দিক-

⇨ প্রাথমিক বিনিয়োগ: ১ বিঘা পলিহাউস তৈরি ও যন্ত্রপাতি স্থাপনে গড়ে ১২–১৫ লাখ টাকা লাগতে পারে।

⇨ ফলন: ১ বিঘায় বছরে প্রায় ৮–১০ টন স্ট্রবেরি উৎপাদন সম্ভব।

⇨ আয়: স্থানীয় বাজারে কেজিপ্রতি ৩০০–৪৫০ টাকা, রপ্তানিতে আরও বেশি দাম পাওয়া যায়।

⇨ লাভ: সঠিক ব্যবস্থাপনায় ১–২ বছরের মধ্যেই বিনিয়োগ ফেরত সম্ভব।
 

বিশ্বে পলিহাউসে স্ট্রবেরি চাষ-নেদারল্যান্ডস, জাপান, কোরিয়া, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রযুক্তি বহুল ব্যবহৃত। জাপানে হাইড্রোপনিক পলিহাউসে চাষ করা স্ট্রবেরি প্রিমিয়াম মার্কেটে কেজি প্রতি ১৫–২০ ডলার বিক্রি হয়।
 

সম্ভাবনা:

⇨ শহরকেন্দ্রিক সুপারশপ ও হোটেল-রেস্টুরেন্টে চাহিদা বাড়ছে।

⇨  প্রক্রিয়াজাত পণ্য (জ্যাম, আইসক্রিম, জেলি) শিল্পে চাহিদা রয়েছে।

⇨  রপ্তানির সুযোগ বাড়ছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়।
 

চ্যালেঞ্জ:

⇨ প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি।

⇨ প্রশিক্ষিত জনবল কম।

⇨ প্রযুক্তি সরঞ্জাম আমদানিনির্ভর।
 

ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা:

⇨ গবেষণা ও উদ্ভাবন: স্থানীয় আবহাওয়ায় মানানসই জাত উদ্ভাবন।

⇨ সরকারি সহায়তা: ঋণ সুবিধা ও ভর্তুকি।

⇨ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র: কৃষকদের জন্য পলিহাউস ব্যবস্থাপনা শেখানো।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ