নাক ডাকা হাসির কথা নয়,আড়ালে লুকানো প্রাণঘাতী স্বাস্থ্যঝুঁকি ! - না জানলে বিপদ অনিবার্য

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আপনি কি মনে করেন সঙ্গীর নাক ডাকা শুধু রাতের ঘুম নষ্ট করার ঝামেলা? বিজ্ঞানের ভাষায়, নাক ডাকা অনেক সময়ই শরীরের ভিতরে চলা গভীর সমস্যার একটি লাল সংকেত। বিশেষ করে, এটি হতে পারে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধির ইঙ্গিত।
নাক ডাকার মূল কারণ সাধারণত শ্বাসনালীর আংশিক বাধা। ঘুমের সময় জিভ, গলার পেছনের টিস্যু, অথবা নরম তালু শ্বাসনালীর পথ সরু করে দিলে বাতাস চলাচলে কম্পন তৈরি হয়, যেটিই আমরা 'নাক ডাকা' হিসেবে শুনি।
তবে সমস্যাটি কেবল শব্দে সীমাবদ্ধ নয়-এটি প্রায়ই অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া(Obstructive Sleep Apnea – OSA)-এর একটি লক্ষণ। এই রোগে ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাস বন্ধ বা ধীর হয়ে যায়, যার ফলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পায় এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে যায়।
যেভাবে এটি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কে ক্ষতি করে-
১। রক্তচাপ বৃদ্ধি: অক্সিজেনের ঘাটতি মস্তিষ্ককে সতর্ক সংকেত পাঠায়, যা শরীরে স্ট্রেস হরমোন (যেমন অ্যাড্রেনালিন) বাড়িয়ে রক্তচাপকে উঁচু করে দেয়।
২। হৃদযন্ত্রে অতিরিক্ত চাপ: অক্সিজেন কমে গেলে হৃদপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করতে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, যা সময়ের সাথে হার্ট ফেইলিওর বা অ্যারিদমিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
৩। স্ট্রোকের সম্ভাবনা: ঘন ঘন শ্বাসের ব্যাঘাত রক্তের সান্দ্রতা ও প্লাক জমাট বাঁধা বাড়িয়ে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধের সম্ভাবনা তৈরি করে।
৪। মেটাবলিক সমস্যা:স্লিপ অ্যাপনিয়া ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যা আবার হৃদরোগের সাথে সম্পর্কিত।
পরিসংখ্যান যা না জানলেই নয়-
◑ যুক্তরাষ্ট্রে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাঝারি বা তীব্র স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ।
◑ ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গুরুতর স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোকের সম্ভাবনা ৪ গুণ বেশি।
◑ বাংলাদেশে নির্ভুল পরিসংখ্যান কম হলেও, শহুরে অতিরিক্ত ওজনধারী মধ্যবয়সী পুরুষদের মধ্যে নাক ডাকার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।
লক্ষণ:
যদি নাক ডাকার সাথে নিচের উপসর্গগুলো মিলে যায়, তবে দেরি না করে পরীক্ষা করা উচিত:
⇨ ঘুমের সময় হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া (পরিবারের সদস্যরা দেখে থাকতে পারেন)
⇨ দিনের বেলা অস্বাভাবিক ঘুম ঘুম ভাব
⇨ ঘুম ভাঙার পর মাথাব্যথা
⇨ মনোযোগ কমে যাওয়া বা সহজে রেগে যাওয়া
⇨ রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের জন্য জাগা
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
১। ওজন নিয়ন্ত্রণ – অতিরিক্ত ওজন গলায় চর্বি জমিয়ে শ্বাসনালীর চাপ বাড়ায়।
২। ঘুমের ভঙ্গি পরিবর্তন – চিত হয়ে না শুয়ে পাশ ফিরে শোয়া নাক ডাকা কমাতে পারে।
৩। অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার– এগুলো শ্বাসনালী শিথিল করে অবস্থা খারাপ করে।
৪। CPAP মেশিন ব্যবহার – অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার জন্য অন্যতম কার্যকর চিকিৎসা।
৫। প্রয়োজনে সার্জারি– শ্বাসনালীতে কাঠামোগত সমস্যার ক্ষেত্রে।
নাক ডাকা শুধু একটি রাতের অসুবিধা নয়-এটি আপনার শরীরের ভেতরে চলা অক্সিজেন ঘাটতি, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদযন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপের এক নীরব প্রমাণ হতে পারে। সময়মতো পদক্ষেপ নিলে এই "নিদ্রার শব্দ" থেকে প্রাণঘাতী বিপদ ঠেকানো সম্ভব।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।