রাতে অতিরিক্ত আলো: হৃদরোগ ঝুঁকির নতুন সতর্কবার্তা

রাতে অতিরিক্ত আলো: হৃদরোগ ঝুঁকির নতুন সতর্কবার্তা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমাদের শরীরের দৈনিক জীবনীশক্তি এবং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে একটি 'জৈবিক ঘড়ি' বা সার্কেডিয়ান রিদম। এটি প্রায় ২৪ ঘণ্টার এক স্বয়ংক্রিয় সময়মাপক যন্ত্র, যা নিয়ন্ত্রণ করে ঘুম, হরমোন স্রাব, রক্তচাপ এবং বিপাকীয় কার্যক্রম।

সাম্প্রতিক এক বৃহৎ পরিসরের অধ্যয়নে (৮৮,৯০৫ জন প্রাপ্তবয়স্কের ৯.৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে) পাওয়া গেছে যে, যারা রাতে অতিরিক্ত আলোর সংস্পর্শে থাকেন, তাদের মধ্যে বিভিন্ন হৃদরোগ যেমন: করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর, অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
 

কেন রাতে আলো হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়?

১. সার্কেডিয়ান রিদমের ব্যাঘাত: রাতে আলো শরীরের মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। মেলাটোনিন হলো ঘুমের জন্য অপরিহার্য একটি হরমোন, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যখন মেলাটোনিনের মাত্রা কমে যায়, তখন ঘুমের গুণগত মান খারাপ হয় এবং রক্তচাপ ওঠানামা করে।

 

২. ঘুমের ব্যাঘাত ও হরমোনের পরিবর্তন: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল বেশি উৎপাদন করে, যা দীর্ঘমেয়াদে রক্তচাপ এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
 

৩. রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন: রাতে আলো শরীরের গ্লুকোজ মেটাবোলিজমেও প্রভাব ফেলে, যার ফলে ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য মেটাবলিক ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি বাড়ে, যা পরোক্ষভাবে হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
 

গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের এবং তরুণদের ক্ষেত্রে এই আলো-হার্ট সম্পর্ক একটু বেশি প্রবল। এর পেছনে থাকতে পারে যৌন হরমোন এবং বয়সভিত্তিক মেটাবলিক পার্থক্য। বিশেষ করে নারীদের শরীরের মেলাটোনিন উৎপাদন বয়ঃসন্ধিকালে এবং পরবর্তীতে পরিবর্তিত হয়, যা আলোয়ের প্রভাব বাড়াতে পারে।

এই গবেষণা একটি অবজারভেশনাল স্টাডি, অর্থাৎ এটি শুধুমাত্র আলো এবং হৃদরোগের সম্পর্কের সম্ভাব্য সংযোগ দেখিয়েছে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট কারণ-ফলাফল নিশ্চিত করেনি। অর্থাৎ আলোই কি সরাসরি হৃদরোগের কারণ, তা বলা যাচ্ছে না।

এই গবেষণা MedRxiv-তে প্রিপ্রিন্ট আকারে প্রকাশিত, অর্থাৎ এটি এখনো পিয়ার-রিভিউড নয়। তাই বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা এর ওপর আরও বিস্তারিত ও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার জন্য অপেক্ষা করছেন।
 

করণীয় ও সতর্কতা:

⇨রাতের ঘর অন্ধকার রাখা:
রাতের আলো কমিয়ে ঘুমের পরিবেশ যতটা সম্ভব শান্ত ও অন্ধকার রাখা জরুরি। বিশেষ করে ঘুমানোর আগে মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপের স্ক্রিন বন্ধ রাখা বা ব্লু-লাইট ফিল্টার ব্যবহার করা।

⇨ নিয়মিত ঘুমের রুটিন:
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ওঠার অভ্যাস হৃদরোগ ও সার্কেডিয়ান রিদম ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

⇨ হৃদয় সচেতন জীবনযাপন:
নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণও গুরুত্বপূর্ণ।
 

আজকের আধুনিক জীবনযাত্রায় সার্কেডিয়ান রিদমের ওপর চাপ বাড়ছে-রাতজাগা, রাতে কাজ, সোশ্যাল মিডিয়া, ক্রমাগত আলো-এসবই মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক চক্রকে বিঘ্নিত করছে। এর ফলে শুধু হৃদরোগ নয়, ডায়াবেটিস, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং ওজন বৃদ্ধির মতো রোগের ঝুঁকিও বেড়েছে।

রাতে অতিরিক্ত আলোতে থাকার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে-এমন একটি তথ্য আমাদের জন্য সতর্কবার্তা। যদিও এই গবেষণা এখনও সম্পূর্ণরূপে বৈজ্ঞানিক সমর্থন পায়নি, তবুও রাতের আলো এড়িয়ে চলা, অন্ধকারে ঘুমানো ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করাই মঙ্গলজনক। ভবিষ্যতে পিয়ার-রিভিউড গবেষণার মাধ্যমে এই সম্পর্কের গভীরতা আরও স্পষ্ট হবে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ