জানুন বিরল স্নায়ুবিক রোগ 'এলিয়েন হ্যান্ড সিন্ড্রোম'-এর অবিশ্বাস্য ও রহস্যময় কাহিনি

জানুন বিরল স্নায়ুবিক রোগ 'এলিয়েন হ্যান্ড সিন্ড্রোম'-এর অবিশ্বাস্য ও রহস্যময় কাহিনি
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ভাবুন তো-আপনি বই পড়ছেন, হঠাৎ আপনার একটি হাত বই বন্ধ করে অন্য কিছু তুলে নিল, অথচ আপনি তা করতে চাননি। আপনি থামাতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু হাত যেন নিজের আলাদা 'মস্তিষ্ক' দিয়ে চলতে লাগল। এটি কল্পনা নয়-বিরল এক স্নায়ুবিক রোগ, এলিয়েন হ্যান্ড সিন্ড্রোম (Alien Hand Syndrome)-এর বাস্তব লক্ষণ।

এলিয়েন হ্যান্ড সিন্ড্রোম (AHS) হলো এক ধরনের Motor Control Disorder যেখানে হাত বা বাহুর নড়াচড়া voluntary control অর্থাৎ ইচ্ছানিয়ন্ত্রিত না হয়ে involuntary অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে। আক্রান্ত ব্যক্তি জানেন হাত কী করছে, কিন্তু তাতে নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
 

রোগের উৎপত্তি ও ইতিহাস

⇨ প্রথম আবিষ্কার: ১৯০৮ সালে জার্মান নিউরোলজিস্ট কুর্ট গোল্ডস্টেইন এক রোগীর ক্ষেত্রে এই সিন্ড্রোম শনাক্ত করেন।

⇨ নামকরণ: "Alien Hand Syndrome" পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয় ১৯৭২ সালে।
 

এর পর থেকে পৃথিবীতে কয়েক ডজন নিশ্চিত কেস রিপোর্ট হয়েছে, যা প্রমাণ করে এটি অত্যন্ত বিরল একটি অবস্থা।
 

মস্তিষ্কে কোন অংশে সমস্যা হলে হয়?

মস্তিষ্কের কয়েকটি নির্দিষ্ট অংশে ক্ষতি হলে AHS হতে পারে-

⇨ Corpus Callosum: ডান ও বাম মস্তিষ্ক গোলার্ধের মধ্যে যোগাযোগের সেতু।

⇨ Frontal Lobe: পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত ও নড়াচড়া শুরু করার জন্য দায়ী অংশ।

⇨ Parietal Lobe: স্থানিক সচেতনতা ও আন্দোলন বোঝায় ভূমিকা রাখে।

⇨ Thalamus: মস্তিষ্কে সিগন্যাল ট্রান্সফারের মূল কেন্দ্র।
 

কারণ:

⇨ মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার (বিশেষ করে করপাস ক্যালোসাম কেটে দেওয়া, যেমন এপিলেপসি চিকিৎসায় split-brain surgery)

⇨ স্ট্রোক

⇨ Brain Tumor

⇨ Neurodegenerative diseases (যেমন Creutzfeldt–Jakob disease, Alzheimer's disease)

⇨ Traumatic Brain Injury
 

লক্ষণ‌:

⇨হাত হঠাৎ করে বস্তু ধরা, ছেড়ে দেওয়া বা নাড়া

⇨ নিজের জামা খুলে ফেলা বা লাগানো বোতাম খুলে ফেলা

⇨ এক হাত অন্য হাতের কাজ বাধা দেওয়া

⇨ আক্রান্ত হাতকে নিজের না মনে হওয়া

⇨ অদ্ভুতভাবে হাত "ব্যক্তিত্ব" পেয়েছে বলে মনে হওয়া
 

গবেষকরা AHS-কে তিন ভাগে ভাগ করেছেন-

☞Callosal Type: করপাস ক্যালোসামের ক্ষতির কারণে, দুই হাত একে অপরের বিপরীত আচরণ করে।

☞Frontal Type: ফ্রন্টাল লোব ক্ষতিগ্রস্ত হলে, হাত হঠাৎ জিনিসপত্র ধরতে বা ছুঁতে শুরু করে।

☞Posterior Type: প্যারাইটাল বা অক্সিপিটাল লোব ক্ষতিগ্রস্ত হলে, হাতের গতিবিধি বিশৃঙ্খল হয়।
 

বিশ্বের উল্লেখযোগ্য কেস-

➤কলম্বিয়ায় এক নারী স্ট্রোকের পর প্রতিদিন ঘুমের সময় নিজের হাত দিয়ে গলা চেপে ধরার অভিজ্ঞতা পেতেন।

➤যুক্তরাষ্ট্রে এক রোগীর হাত নিত্যদিন আলমারির দরজা খুলে ফেলত, যদিও তিনি বন্ধ রাখার চেষ্টা করতেন।

 

চিকিৎসা :

দুর্ভাগ্যবশত, এই রোগটির এখনও পর্যন্ত  AHS-এর  কোনো কার্যকর চিকিৎসা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তবে কয়েকটি পদ্ধতি উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে-

⇨ ফিজিওথেরাপি ও অকুপেশনাল থেরাপি: হাতের মোটর কন্ট্রোল বাড়ানো।

⇨ মিরর থেরাপি ও ভিজ্যুয়াল ট্রেনিং: আয়নায় হাত দেখা বা দৃষ্টি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ শেখা। 

⇨ হাতকে ব্যস্ত রাখা (কিছু ধরা বা পকেটে রাখা)।

⇨ মানসিক কাউন্সেলিং, কারণ এই সিন্ড্রোম মানসিক চাপ বাড়ায়।


গবেষণার ভবিষ্যৎ দিক-

⇨ Functional MRI ব্যবহার করে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ

⇨ Brain-computer interface দিয়ে হাতের অনিয়ন্ত্রিত গতিবিধি ব্লক করার পরীক্ষা

⇨ Neuroplasticity-based therapy উন্নয়ন

 

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে, এখনো AHS নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা বা পরিসংখ্যান নেই। তবে নিউরোলজিস্টরা বলছেন, স্ট্রোক, টিউমার অপারেশন বা মাথায় আঘাতের পর এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত নিউরোলজি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এই রোগ সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দেওয়া এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সহযোগিতা করা একান্ত প্রয়োজন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ