গোপন কৃষি কৌশল-যা জানলেই এক গাছেই মিলবে ভিন্ন ভিন্ন ফলের স্বাদ

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
উদ্ভিদ জগতে এমন কিছু কৌশল আছে যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কৃষক ও উদ্যানবিদরা ব্যবহার করে আসছেন, কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান সেই প্রাচীন কৌশলগুলিকে আরও উন্নত, কার্যকর ও বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করে তুলেছে। গ্রাফটিং (Grafting) বা জোড় কলম এমনই এক পদ্ধতি, যেখানে উদ্ভিদের এক অংশ আরেক উদ্ভিদের সাথে এমনভাবে যুক্ত করা হয় যেন তারা মিলেমিশে একক উদ্ভিদে পরিণত হয়।
গ্রাফটিং-এ উপরের অংশকে বলা হয় সায়ন (Scion) - যা সাধারণত কাঙ্ক্ষিত ফল, ফুল বা পাতার বৈশিষ্ট্য বহন করে।
নিচের অংশটি রুটস্টক (Rootstock) যা উদ্ভিদের মূল ও নীচের কান্ড গঠন করে এবং মাটির সাথে সংযোগ বজায় রাখে। রুটস্টক নির্বাচন করা হয় মূলত তার শক্তিশালী মূল ব্যবস্থা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ও পরিবেশ সহনশীলতার জন্য।
এই কৌশলের মাধ্যমে কৃষকরা এমন গাছ তৈরি করতে পারেন, যা একদিকে উচ্চমানের ফল বা ফুল দেয়, আবার অন্যদিকে কঠিন জলবায়ু ও রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হয়। ফলে গ্রাফটিং শুধু শখের বাগান নয়, বরং বাণিজ্যিক কৃষি ও ফল উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
প্রক্রিয়া:
গ্রাফটিং হলো দুটি ভিন্ন গাছের অংশকে সংযুক্ত করার প্রক্রিয়া, যেখানে-
⇨ স্কিয়ন (Scion): কাঙ্খিত ফল উৎপাদনের জন্য নির্বাচিত গাছের শাখা বা কাণ্ড।
⇨ পটিয়ন (Rootstock): গাছের মূল বা কান্ড, যা গাছের বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মাটির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়।
স্কিয়ন এবং পটিয়ন দুটো সংযুক্ত হয়ে একটি শক্তিশালী, রোগপ্রতিরোধী ও উন্নত ফলদ গাছ গড়ে তোলে।
প্রধান পদ্ধতি:
⇨ ক্যান্ডল গ্রাফটিং: নবজাতক গাছের কাণ্ডে একক শাখা লাগানো হয়, দ্রুত ফলন শুরু হয়।
⇨ বাইপাস গ্রাফটিং: পুরনো গাছের শাখা কেটে নতুন স্কিয়ন সংযুক্ত করা হয়।
⇨ বুড গ্রাফটিং: গাছের কাণ্ড থেকে কুঁড়ি বা কচি শাখা তুলে পটিয়নে লাগানো হয়।
⇨ স্লাইস গ্রাফটিং: পটিয়নের শাখায় স্লাইস কাট দিয়ে স্কিয়ন বসানো হয়, সাধারণ ও কার্যকর পদ্ধতি।
সুবিধা:
⇨ দ্রুত ফলন: বীজ থেকে গাছ অপেক্ষা কম সময়ে ফল পাওয়া যায়।
⇨ উন্নত ফলের গুণগত মান: নির্দিষ্ট জাতের ফল পাওয়া যায়, যেমন মিষ্টি আম, রসালো লিচু।
⇨ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: পটিয়নের কারণে গাছ রোগ প্রতিরোধী হয়।
⇨ দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তিশালী গাছ: আদি গাছের থেকে বেশি দিন ও বেশি ফল দেয়।
⇨ বহুজাতীয় ফল উৎপাদন: এক গাছে একাধিক জাতের ফল লাগানো সম্ভব।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রাফটিং ও ফলের জাত পরিবর্তন-
বাংলাদেশে আম, লিচু, জাম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলের উন্নত জাত আনা হচ্ছে এবং গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত ফলন নিশ্চিত করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে। রোগবালাই কমে, উৎপাদন বেড়ে কৃষকের আয় বাড়ছে।
স্থানীয় জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়ানো উন্নত জাতের চাষ বাড়ছে।
সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ:
⇨ জেনেটিক ও মাইক্রোগ্রাফটিং: জেনেটিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দ্রুত ও উন্নত গাছ তৈরি করা হচ্ছে।
⇨ প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাছের স্বাস্থ্য ও মাটির পুষ্টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
⇨ চ্যালেঞ্জ: অভিজ্ঞতা সঠিক না থাকলে গ্রাফটিং ব্যর্থ হতে পারে, সঠিক পটিয়ন ও স্কিয়ন নির্বাচন জরুরি।
ফলের জাত পরিবর্তন ও গ্রাফটিং পদ্ধতি আধুনিক কৃষির একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা শুধু ফল উৎপাদন বাড়ায় না, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কৃষকের আয়ও বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি সঠিকভাবে প্রয়োগ হলে দেশের কৃষিক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।