ডিজিটাল যুগে পড়াশোনা ও বিনোদন-যেভাবে সামঞ্জস্য করবেন!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
শিক্ষা কি হার মানছে স্ক্রিনের চোখধাঁধানো আকর্ষণের কাছে? সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন এখন-সোশ্যাল মিডিয়া, শর্ট ভিডিও এবং গেমিং কি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মননশীলতা, মনোযোগ এবং একাডেমিক পারফরম্যান্সকে গিলে খাচ্ছে? বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাচ্ছে TikTok, YouTube Shorts, Reel এবং মোবাইল গেমে। প্রথমে বিনোদন হিসেবে শুরু হলেও এটি এখন অনেকের জন্য একপ্রকার মানসিক নির্ভরতা-যাকে বলা হয় "digital addiction" বা ডিজিটাল আসক্তি।
নিউরোসায়েন্স বলছে, দ্রুত গতির ভিডিও আর গেমিংয়ের ফলে মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক হরমোনের প্রবাহ বেড়ে যায়, যা মুহূর্তিক আনন্দ দেয়। কিন্তু একটানা এই 'ডোপামিন রাশ' দীর্ঘমেয়াদে মনোযোগ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং পাঠ্যবইয়ের মতো ধীর, গভীর মনোযোগসাপেক্ষ কাজগুলোতে অরুচি তৈরি করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটায়, তাদের পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলকভাবে কম হয় এবং তারা দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।
পড়াশোনায় প্রভাব :
⇨ মেমোরি রিটেনশন কমে যাচ্ছে-অর্থাৎ শেখা জিনিস মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
⇨ মাল্টিটাস্কিং অভ্যাস তৈরি হচ্ছে, কিন্তু গভীর মনোযোগ হারিয়ে যাচ্ছে।
⇨ রুটিন ভাঙন ঘটছে-রাত জেগে স্ক্রল, সকালে ক্লাসে ক্লান্তি।
⇨ মানসিক চাপ ও অস্থিরতা বাড়ছে, যার পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে পরীক্ষার ফলাফল ও আত্মবিশ্বাসে।
⇨ মনোযোগে হ্রাস: দীর্ঘ সময় ধরে এক জায়গায় চোখ রাখার ক্ষমতা কমে যায়।
⇨ মেমোরি লস: শেখা তথ্য দ্রুত ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
⇨ পরীক্ষার ফলাফলে পতন: অনলাইন আসক্তি বেশি শিক্ষার্থীর ফলাফল নেমে আসছে।
⇨ ঘুমের ব্যাঘাত: রাতে দেরি করে স্ক্রিনে থাকার ফলে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না, যা শেখার ক্ষমতাকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
⇨ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: সোশ্যাল মিডিয়ার তুলনা এবং গেমিংয়ে হারের ফলে হতাশা বেড়ে যায়, যা শিক্ষায় মনোযোগ কমায়।
কারণ শুধু স্ক্রিন নয়, কনটেন্টও গুরুত্বপূর্ণ-
শুধু সময় নয়, কনটেন্টের ধরনও এখানে বড় একটি ভূমিকা রাখে। অধিকাংশ শর্ট ভিডিও অগভীর, দ্রুত বদলে যাওয়া ভিজ্যুয়াল এবং অডিও দিয়ে তৈরি, যা মস্তিষ্ককে বারবার নতুন উদ্দীপনায় ঠেলে দেয়। এই ধরনের কনটেন্টে অভ্যস্ত হলে ধৈর্যশীলতা এবং বিশ্লেষণক্ষমতা হ্রাস পায়।
বিকল্প যা হতে পারে-
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা নয়, প্রয়োজন সচেতন ডিজিটাল অভ্যাস। যেমন-
⇨ পড়াশোনার জন্য নির্ধারিত সময় নির্দিষ্ট রাখা
⇨ নির্দিষ্ট সময়ের পর স্ক্রিন ফ্রি জোন চালু করা
⇨ স্ক্রিন টাইম ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহার।
⇨ অফলাইন হবি যেমন বই পড়া, সৃজনশীল কাজকে উৎসাহ দেওয়া।
⇨ ডিজিটাল টাইম ম্যানেজমেন্ট: পড়াশোনার জন্য স্পষ্ট সময় নির্ধারণ ও স্ক্রিন টাইম সীমিত করা।
⇨ স্ক্রিন ফ্রি পিরিয়ড: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্ক্রিন থেকে বিরতি।
⇨ অফলাইন শখ: বই পড়া, খেলা, সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা।
⇨ অভিভাবকদের ভূমিকা: প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও সময়সীমা নির্ধারণে পরিবার থেকে নজরদারি ও সহযোগিতা।
⇨ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: অনলাইন আসক্তির বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ডিজিটাল ভারসাম্যের উপর গুরুত্বারোপ।
ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তি ছাড়া শিক্ষা কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার না হলে তা হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় বাধা। তাই এখনই সময়, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও নীতিনির্ধারকদের সম্মিলিতভাবে নতুন এক ডিজিটাল ভারসাম্য নীতি নিয়ে ভাবার। তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্তই পারে আমাদের নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে প্রযুক্তির বন্ধু হিসেবে, শিকল নয়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।