কোমায় থাকা মানে কি মৃত্যুর খেলা?-জানুন মস্তিষ্কের গভীরে কী ঘটে এই অবস্থায়

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
চোখ বন্ধ, দেহ নিস্তেজ, মুখে শান্তির ছাপ-দেখলে মনে হবে রোগী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটিকে বলা হয় কোমা-একটি মারাত্মক Disorder of Consciousness, যেখানে মানুষের সজাগতা (Awake) ও সচেতনতা (Aware)-দুটোই পুরোপুরি হারিয়ে যায়। বাইরে থেকে শান্ত ঘুমের মতো লাগলেও ভেতরে মস্তিষ্কের কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগতে চলে যায়।
চিকিৎসাশাস্ত্রে কোমা শব্দটি প্রথম প্রচলিত হয় গ্রিক শব্দ koma থেকে, যার অর্থ "গভীর ঘুম"।
বর্তমানে কোমা নির্ণয়ে Glasgow Coma Scale (GCS) ব্যবহার করা হয়, যা রোগীর চোখ খোলা, কথাবার্তা ও শারীরিক প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে স্কোর দেয়।
ঘুম আর কোমার মূল পার্থক্য:
ঘুমে: মস্তিষ্কে স্বাভাবিক স্লিপ সাইকেল থাকে, REM পর্যায়ে স্বপ্ন দেখা যায়, বাহ্যিক উদ্দীপনায় সাড়া পাওয়া যায়।
কোমায়: কোনো স্বপ্ন নেই, কোনো REM সাইকেল নেই, প্রতিক্রিয়া প্রায় শূন্য।
ফাংশনাল এমআরআই স্ক্যান দেখায়, কোমার সময় মস্তিষ্ক স্বাভাবিক জাগ্রত অবস্থার তুলনায় ৫০-৬০% কম শক্তি ব্যবহার করে। গভীর ঘুমের তুলনায়ও শক্তি ব্যবহার কমে প্রায় ১০-২০%।
কেন হয় কোমা?-প্রধান কারণসমূহ
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেন, কোমা মূলত মস্তিষ্কে গুরুতর ক্ষতির ফল। এর মধ্যে-
⇨ স্ট্রোক – মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা লিক হয়ে কোষের মৃত্যু।
⇨ অক্সিজেনের ঘাটতি – হার্ট অ্যাটাক বা ডুবে যাওয়ার পর।
⇨ গুরুতর আঘাত (Traumatic Brain Injury) – সড়ক দুর্ঘটনা, মাথায় আঘাত।
⇨ সংক্রমণ বা প্রদাহ – যেমন এনসেফালাইটিস বা মেনিনজাইটিস।
⇨ বিষক্রিয়া বা ওষুধের প্রতিক্রিয়া – অ্যালকোহল, কার্বন মনোক্সাইড, অতিরিক্ত ওষুধ সেবন।
মস্তিষ্কে যা ঘটে কোমার সময়:
দুইটি নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়-
☞ অভ্যন্তরীণ সজাগতার নেটওয়ার্ক (নিজস্ব চিন্তা, অনুভূতি)
☞ বাহ্যিক সজাগতার নেটওয়ার্ক (বাইরের জগৎ বোঝা ও প্রতিক্রিয়া)
- শব্দ বা স্পর্শের সংকেত প্রবেশ করে ঠিকই, কিন্তু করটেক্সের যথাযথ স্থানে পৌঁছায় না—ফলে রোগী বোঝে না।
২০০০ সালের Brain জার্নালের গবেষণা অনুযায়ী, কোমায় থাকা রোগীরা শব্দ শুনতে পেলেও অর্থ বুঝতে অক্ষম।
জনপ্রিয় মিথ -"কোমায় থাকা মানুষ সব শুনতে পায়"-এটি সিনেমার গল্প। বাস্তবে তারা কিছু শব্দ অনুভব করতে পারে বটে, কিন্তু তা বোঝার ক্ষমতা থাকে না। ঘুমন্ত মস্তিষ্ক যেভাবে তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে, কোমার মস্তিষ্কে তা হয় না।
অ্যানেস্থেসিয়া ও কোমা-দুইয়ের মিল
জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া সাময়িকভাবে মস্তিষ্ককে 'রিভার্সিবল কোমা'-তে পাঠায়। এজন্য বিজ্ঞানীরা অ্যানেস্থেসিয়াকে কোমা গবেষণার মডেল হিসেবে ব্যবহার করেন। পার্থক্য হলো-অ্যানেস্থেসিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ওষুধের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা যায়, কিন্তু কোমা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেরে ওঠে বা চিকিৎসায় ধীরে ধীরে উন্নতি হয়।
পূর্বাভাস ও সুস্থতার সম্ভাবনা
⇨ সময়কাল: কোমা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক মাস স্থায়ী হতে পারে।
⇨ প্রগনোসিস: আঘাতের ধরন, বয়স, চিকিৎসা পাওয়ার সময়-সবকিছুর উপর নির্ভর করে।
⇨ ফিরে আসলে: কোমার সময়কার কোনো স্মৃতি রোগীর থাকে না।
কোমা বোঝা মানে মানবচেতনার প্রকৃতি বোঝা। চেতনা কখন বন্ধ হয়, মস্তিষ্ক তখন কীভাবে কাজ করে-এসব জানা গেলে স্নায়ুবিজ্ঞানে নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি তৈরি সহজ হবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।