প্রযুক্তি কি আমাদের চিন্তা-শক্তি কেড়ে নিচ্ছে? মনোবিজ্ঞানে আগুন সতর্কতা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
প্রতিদিনের জীবনে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার এখন অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কিংবা কম্পিউটার—এসব যন্ত্র আমাদের শেখাচ্ছে, সংযুক্ত করছে, বিনোদন দিচ্ছে। কিন্তু একদিকে যেমন প্রযুক্তি আমাদের কাজের দক্ষতা বাড়াচ্ছে, তথ্য সহজে পৌঁছে দিচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে তা হয়ে উঠছে এক ভয়াবহ আসক্তির কারণ। ডিজিটাল ডিভাইসের সামনে অতিরিক্ত সময় কাটানো এখন এক নতুন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। গবেষণার পরিসংখ্যান বলছে, গড়ে এক ব্যক্তি দিনে প্রায় আট ঘণ্টা সময় কাটাচ্ছে ডিজিটাল স্ক্রিনের সামনে। এর মধ্যে কাজের জন্য ব্যবহৃত সময় যেমন রয়েছে, তেমনি সোশ্যাল মিডিয়া, গেম, অনাকাঙ্ক্ষিত ভিডিও দেখার সময়ও কম নয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই সময়ের বড় অংশ 'অপ্রোডাকটিভ' বা উৎপাদনশীলতার বাইরের কাজেই চলে যাচ্ছে।
কী হয় মস্তিষ্কে?
নিউরোইমেজিং গবেষণায় দেখা গেছে, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের সময় মস্তিষ্কের ডোপামিন নামক রাসায়নিকের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। ডোপামিন 'সুখ' এবং 'পুরস্কারের অনুভূতি' সৃষ্টি করে। ফলে স্মার্টফোন কিংবা গেম থেকে নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ অনুভবের চাহিদা বাড়তে থাকে, যা আসক্তির জন্ম দেয়। এই আসক্তি ক্রমে মনোযোগ বিভ্রাট, চাপ, উদ্বেগ এবং ঘুমের গুণগত মান হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এই সমস্যা দ্রুত বাড়ছে। দীর্ঘ সময় অনলাইন থাকার ফলে বাস্তব সামাজিক যোগাযোগ ও শারীরিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে, যা মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক সুস্থতার জন্য হুমকি।
কিন্তু প্রযুক্তি কি শুধুই ক্ষতিকর?
অবশ্যই নয়। সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রযুক্তি হতে পারে সবচেয়ে বড় উৎপাদনশীলতার হাতিয়ার। সময় ব্যবস্থাপনা, কাজের অগ্রগতি নিরীক্ষণ, শেখা-শিখানোর আধুনিক প্ল্যাটফর্ম—এসবই প্রমাণ করে প্রযুক্তি জীবনকে সহজ ও সৃজনশীল করে তুলতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, অনলাইন কোর্স, ডিজিটাল নোট, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুলস ব্যবহার করে একজন কর্মী বা শিক্ষার্থী তার কাজের গুণগত মান ও পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে।
সমাধানের পথ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসক্তি থেকে উত্তরণের জন্য প্রথম ধাপ হচ্ছে 'সচেতন ব্যবহার'। ডিজিটাল ডিটক্স, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় প্রযুক্তি থেকে বিরতি নেওয়া, প্রয়োজনীয় অ্যাপস ও ওয়েবসাইটে সময় সীমাবদ্ধতা আরোপ করা, 'নোটিফিকেশন' নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কার্যকর।
তাছাড়া পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার বিষয়ে নিয়মিত সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ জরুরি। শিশু ও কিশোরদের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা উচিত, যাতে তারা প্রযুক্তির সুযোগ গ্রহণ করে, ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারে।
সচেতন হওয়া এখন সময়ের দাবি-
যে প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে, সেটিকে শত্রু না করে বন্ধু বানাতে হবে। প্রতিদিন আমরা কতটা সময় উৎপাদনশীল কাজে ব্যয় করছি, আর কতটা সময় অসংলগ্ন ডিজিটাল নোংরা তথ্যে নিঃশেষ করছি—এই হিসাব রাখতে পারলেই আমরা জয়ী হবো ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও সামাজিক পর্যবেক্ষণই নির্দেশ করে, প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করলেই সম্ভব 'মানুষ ও মেশিনের' সুষম ও স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলা। আর তা না হলে ডিভাইসের সামনে কাটানো সময় হয়ে উঠবে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদের অপচয়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।