স্টার্টআপ থেকে সাইবার সিকিউরিটি: প্রযুক্তিতে নারীর নতুন পরিচয় !!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি এনেছে, অন্যদিকে নারীদের জীবনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশে নারীর প্রযুক্তি খাতে প্রবেশ এবং অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়লেও, এই অগ্রগতির পথে নানা ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও কাঠামোগত বাধা আজও বিদ্যমান। এই প্রতিবন্ধকতা ভেঙে সামনে এগোতে পারলে নারীরা শুধু নিজেকে নয়, দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করতে পারবেন। গত দশকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের ফলে শিক্ষার সুযোগ বাড়ায় তরুণী নারী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডেটা সায়েন্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ওয়েব ডিজাইন ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে দক্ষতা অর্জন করছেন। এছাড়া ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের জন্য একটি নতুন কর্মসংস্থান সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে, যেখানে বাড়ি থেকেই কাজ করার সুযোগ থাকায় নারীরা পরিবার ও কর্মজীবনকে সহজে সামলাতে পারছেন।
তবে নারীদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অংশগ্রহণের হার এখনও পূর্ণ নয়। সমাজের কিছু প্রচলিত ধারণা ও বাধা তাদের অগ্রগতিকে বাঁধা দিচ্ছে। যেমন, প্রযুক্তির শৃঙ্খলাবদ্ধ ও পুরুষ প্রধান কাজের পরিবেশ, কর্মস্থলে নারী বিরোধী আচরণ, নিরাপত্তাহীনতা, এবং পরিবার ও সমাজের পক্ষ থেকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি সীমাবদ্ধ প্রত্যাশা। অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা উচ্চশিক্ষা নেওয়ার পরও প্রয়োজনীয় কর্মপরিবেশের অভাবে স্বপ্ন বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছেন।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী নেতৃত্বের অভাবও একটি বড় সমস্যা। পরিচালনা পর্যায়ে নারীর সংখ্যা এখনও খুব কম, যার কারণে নারীদের কণ্ঠস্বর পেশাগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে কম প্রকাশ পাচ্ছে। এই কারণে নারীদের প্রগতিশীল নীতি, প্রশিক্ষণ এবং সুবিধাসমূহ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
আশার কথা হলো, নারীদের ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও উদ্যোগ চলছে। দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় নারী ছাত্রদের উৎসাহিত করছে এবং ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মে নারীদের জন্য বিশেষ কোর্স চালু করেছে।
বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য নারী-বান্ধব কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা, দক্ষতা উন্নয়ন ও ক্যারিয়ার গাইডেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশেও এই দিকগুলোতে যথাযথ মনোযোগ বাড়ানো হলে, নারীর উপস্থিতি আরও দৃঢ় ও ব্যাপক হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
অবশেষে বলা যায়, প্রযুক্তি-নির্ভর সমাজে নারীরা শুধু সুযোগের সুবিধাগ্রহী নন, বরং তারা নিজস্ব দক্ষতা ও উদ্ভাবনী শক্তি নিয়ে দেশের ডিজিটাল উন্নয়নে অগ্রদূত। এই অগ্রযাত্রাকে সঠিকভাবে পাথেয় করতে পারলে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত আরো শক্তিশালী ও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠবে, যা সমগ্র জাতির কল্যাণের নিশ্চয়তা বহন করবে।
নারীর তথ্যপ্রযুক্তিতে অংশগ্রহণ শুধু নারীর উন্নয়ন নয়, এটি দেশের প্রযুক্তি ও অর্থনীতির স্বাবলম্বী ভবিষ্যতের রূপরেখা। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, সুশাসন, ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ ছাড়া এই সম্ভাবনা পূর্ণতা পাবে না। তাই এখন সময় সব পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারীর প্রযুক্তি অগ্রযাত্রাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।