উৎসবের দিনে হাসি শুধু চেহারায় নয়, কাজ করে মস্তিষ্কের গভীর স্তরে

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমাদের জীবনে উৎসব শুধু আনন্দের বাহানা নয়, বরং এটি একটি প্রাচীন ও গভীর মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার পদ্ধতি, যা হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের জীবনে সমান গুরুত্ব পেয়েছে। আজকের আধুনিক মনোবিজ্ঞানের আলোকে যখন উৎসবের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হয়, তখন জানা যায় যে উৎসব আমাদের মস্তিষ্ক ও মনকে কত গভীরভাবে স্পর্শ করে, যেটা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এক অমূল্য উপহার।
ডোপামিন: আনন্দের রাসায়নিক কীভাবে উৎসবে কাজ করে?
যখন আমরা উৎসব পালন করি-গাইতে গাইতে, নাচতে নাচতে বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে কাটাতে-আমাদের মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয় ডোপামিন নামক 'সুখের হরমোন'। এই রাসায়নিক মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পুরস্কৃত হওয়ার অনুভূতি তৈরি করে, যা স্ট্রেস ও হতাশার মাত্রা কমায়। নিয়মিত উৎসবের মাধ্যমে এই ডোপামিনের নির্গমন আমাদের মানসিক অবসাদ দূর করে এবং মনের ভার হালকা রাখে।
সামাজিক সংযোগ: উৎসব আমাদের একত্রিত করে-
মানব মস্তিষ্ক সামাজিক জীব-আমরা একাকিত্বের চেয়ে সংযোগকে বেশি মূল্য দিই। উৎসবের সময় যখন আমরা আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে একত্রিত হই, গল্প করি, মজা করি, তখন আমাদের মস্তিষ্ক 'অক্সিটোসিন' মুক্তি দেয়, যাকে 'বন্ধুত্বের হরমোন' বলা হয়। এটি "আমি একা নই" এই অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে এবং আমাদের মানসিক চাপ কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগে জড়িত থাকে, তারা ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকতে পারে।
রিচুয়াল ও নিয়মিততা: মস্তিষ্কের নিরাপত্তা বার্তা-
উৎসবের নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান ও রীতিনীতি আমাদের মস্তিষ্কে একটি পূর্বানুমানযোগ্য ছক তৈরি করে। মন যখন জানে কোন আচরণ কখন ঘটবে, তখন এটি নিরাপদ বোধ করে এবং এই "Predictive Processing" প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্রেইন তার আশপাশের অনিশ্চয়তা কমাতে পারে। এই রিচুয়ালগুলি মস্তিষ্ককে স্থির করে এবং উদ্বেগের মাত্রা কমায়, ফলে আমরা মানসিক শান্তি অনুভব করি।
নস্টালজিয়া: অতীতের সুখের স্মৃতির জাদু-
শিশু কালীন ঈদের পোশাক, পুজোর মিষ্টান্ন বা জন্মদিনের উত্সবের স্মৃতিগুলো উৎসবের সময় নতুন করে জীবন্ত হয়ে উঠে। এই ইতিবাচক স্মৃতিগুলো আমাদের মস্তিষ্কে আনন্দের কেন্দ্রগুলোকে সক্রিয় করে, যা হতাশা ও মন খারাপ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নস্টালজিয়া মানসিক পুনরুজ্জীবনের এক শক্তিশালী উপায়।
সৃজনশীলতা ও নতুনত্ব: উৎসবের অন্য মাত্রা-
উৎসবের সাজ-সরঞ্জাম, নতুন রান্না, আলোকসজ্জা-এসব কেবল বাহ্যিক নয়, এগুলো আমাদের মস্তিষ্কের সৃজনশীল অংশকে উদ্দীপিত করে। এই সৃজনশীলতা চিন্তার জগতে আলো ফেলে এবং নতুন চিন্তা ও আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করে। মানসিক চাপ কমাতে সৃজনশীলতা একটি কার্যকর হাতিয়ার।
উৎসব: এক যৌথ মানসিক চিকিৎসা-
উৎসব কেবল আনন্দের জন্য নয়, এটি একটি 'Collective Psychotherapy' বা যৌথ মানসিক চিকিৎসার পদ্ধতি। প্রতি বছর একবার হলেও এই সময়গুলো আমাদের মনের ভারসাম্য রিসেট করে, স্ট্রেস কমায় এবং সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। আমরা হয়তো জানি না, কিন্তু এই অনুষঙ্গগুলো আমাদের মস্তিষ্ক ও হৃদয়কে পুনর্নবীকরণ করে।
আপনি যখন পরেরবার উৎসবের আনন্দ উপভোগ করবেন, তখন বুঝে বুঝে সেই আনন্দকে নিন। কারণ এটি শুধু শরীরের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নয়, বরং মনের শান্তি ও মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। এই একটুখানি আনন্দ ঠিক ততটাই প্রয়োজন, যতটা আমাদের শ্বাস নেওয়ার জন্য অক্সিজেন দরকার। উৎসবের আনন্দকে আপনার জীবনের মানসিক চিকিৎসায় পরিণত করুন, সচেতনভাবে।
নোট: উৎসব পালন করুন শুধু রীতিমতো আনন্দ করার জন্য নয়, বরং মনের সুস্থতা রক্ষার জন্যও। কারণ একটুখানি হাসি, নাচ আর মেলামেশা অনেক বড় মানসিক ওষুধের সমান।