হাঁচি, কাশি, র‍্যাশ? ফলেই মিলবে মুক্তি-জেনে নিন কোনগুলো!

হাঁচি, কাশি, র‍্যাশ? ফলেই মিলবে মুক্তি-জেনে নিন কোনগুলো!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আজকের আধুনিক জীবনের সঙ্গে জুড়ে গেছে এলার্জির অজানা আতঙ্ক। বাতাসে ধূলিকণা, পরিবেশ দূষণ, অনিয়মিত খাদ্যাভাস, এমনকি ঋতুর পরিবর্তনেই অনেকের শরীরে দেখা দেয় অ্যালার্জির অস্বস্তিকর লক্ষণ। হাঁচি, চোখ লাল হওয়া, গলা চুলকানি, ত্বকে চর্মরোগ-এসব উপসর্গ দৈনন্দিন জীবনকে করে তোলে অস্থির।

চিকিৎসার পাশাপাশি, খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত কিছু ফল শরীরের প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়িয়ে এ সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

চলুন দেখি, কোন ফলগুলো অ্যালার্জির বিরুদ্ধে কার্যকরী এবং কেন..!!
 

১. পেঁপে - শরীরের প্রদাহনাশক বন্ধু

পেঁপে শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং এতে আছে প্যাপেইন নামক শক্তিশালী এনজাইম, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অ্যালার্জি মূলত শরীরের অতিরিক্ত প্রদাহের প্রতিক্রিয়া, তাই পেঁপেতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন C এর সমৃদ্ধি ত্বকের লালচে ভাব ও চুলকানিতে দ্রুত আরাম দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পেঁপে খেলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা অ্যালার্জি প্রতিরোধে সহায়ক।
 

২. আপেল - প্রাকৃতিক হিস্টামিন ব্লকার

আপেলে বিদ্যমান কোয়েরসেটিন নামক ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যালার্জি প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটি শরীরে হিস্টামিন নিঃসরণ কমিয়ে শ্বাসনালীতে প্রদাহ কমায়, ফলে হাঁপানি, নাক দিয়ে পানি পড়া ও চোখ লাল হওয়ার মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আপেল প্রতিদিন খাওয়া মানে শরীরকে একটি প্রাকৃতিক অ্যালার্জি বারিয়ার উপহার দেওয়া।
 

৩. বেরি জাতীয় ফল - অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর

স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাককারেন্ট প্রভৃতি ফল উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধারণ করে। এগুলো শরীরের কোষ রক্ষায় সহায়ক, প্রদাহ কমায় এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। ফলগুলো অ্যালার্জি থেকে সৃষ্ট ত্বকের সমস্যা যেমন র‍্যাশ, চুলকানি ও লালচে ভাব কমাতে প্রাকৃতিক ও নিরাপদ সমাধান।
 

৪. আনারস - ব্রোমেলিনের জাদু

আনারসে থাকা ব্রোমেলিন নামক এনজাইম শরীরের প্রদাহ নিবারণে কার্যকর। ব্রোমেলিন নাক ও শ্বাসনালীর শ্লেষ্মা কমিয়ে শ্বাসকষ্ট ও সর্দি-কাশি উপশমে সাহায্য করে। অনেকে আনারস খাওয়ার পর শ্বাস-প্রশ্বাসে স্বস্তি পান, যা এলার্জির উপসর্গ কমানোর ক্ষেত্রে বড় সহায়ক।
 

৫. সিট্রাস ফল - ভিটামিন C এর ভাণ্ডার

কমলা, মালটা, লেবুসহ সিট্রাস ফলগুলোতে প্রচুর ভিটামিন C থাকে, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরের হিস্টামিন লেভেল কমিয়ে অ্যালার্জির উপসর্গ যেমন নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া ও শ্বাসকষ্ট হ্রাস করে। এছাড়াও, সিট্রাস ফল শরীরকে ডিটক্সিফাই করে, যা ইমিউন সিস্টেমকে আরও সচল করে তোলে।
 

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: অ্যালার্জি শরীরের একটি অস্বাভাবিক ইমিউন প্রতিক্রিয়া, যা প্রায়শই প্রদাহের মাধ্যমে ব্যক্ত হয়। অনেক ফলেই এমন অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে, যা শরীরের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া কমাতে এবং কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে কার্যকর। নিয়মিত এসব ফল খেলে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয় এবং অ্যালার্জির উপসর্গ দ্রুত কমে।

সতর্কতা ও পরামর্শ: যদিও ফলগুলি অ্যালার্জি উপশমে সহায়ক, তবে প্রত্যেকের শরীরের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। বিশেষ করে কারো যদি নির্দিষ্ট ফলের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকে, তাহলে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ফল নির্বাচন করাই যুক্তিসঙ্গত।
 

অ্যালার্জির ঝুঁকি কমাতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন এসব ফল। চিকিৎসার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে নিজেকে সুস্থ রাখা সম্ভব। প্রতিদিন এক মধুর পেঁপে, একটি রসালো আপেল কিংবা কিছু বেরি—এই ছোট ছোট অভ্যাসেই দূর হবে এলার্জির অজানা দংশন!


সম্পর্কিত নিউজ