মস হতে পারে ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক এয়ার কন্ডিশনার

মস হতে পারে ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক এয়ার কন্ডিশনার
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ইট-পাথরের কংক্রিট শহরে একটু সবুজ খুঁজে পাওয়া আজ যেন এক অলীক স্বপ্ন। ছায়াঘেরা পার্ক বা ছাদবাগান ছাড়া চোখে পড়ার মতো সবুজ বলতে গেলে নেই বললেই চলে। অথচ, শহরের গলির কোণে, পুরনো দেয়ালের গায়ে, কিংবা ছাদের ভেজা কোনায় যে সবুজ পাতলা আস্তরণটুকু দেখা যায়-সেটিই হতে পারে শহরের সবচেয়ে অবহেলিত কিন্তু সবচেয়ে কার্যকর 'সবুজ যোদ্ধা'।

এই ক্ষুদ্র উদ্ভিদটির নাম মস (Moss)। গাছ নয়, ঝোঁপঝাড়ও নয়—মস হলো একধরনের ব্রায়োফাইট বা অমূল্য নিম্নবর্গের উদ্ভিদ। এর শিকড় নেই, ডাল নেই, কিন্তু এর অবদান বিজ্ঞানীদের চোখে আজ এক যুগান্তকারী আবিষ্কার।
 

কীভাবে কাজ করে এই মস?

মসের বিস্ময়কর ক্ষমতা হলো তার কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করার দক্ষতা। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, এক বর্গমিটার মস একই আয়তনের অন্য গাছের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি পরিমাণ CO₂ শোষণ করতে পারে। যদিও একক উদ্ভিদ হিসেবে গাছের চেয়ে মস ছোট, কিন্তু সংখ্যায় বেশি থাকার ফলে এটি সম্মিলিতভাবে গাছের চেয়েও বড় প্রভাব ফেলে।

এরা জন্মায় মূলত ভেজা ও ছায়াযুক্ত পরিবেশে। যার মানে, দিনের একটি বড় অংশজুড়ে তারা সালোকসংশ্লেষণ চালিয়ে যেতে পারে—এবং সেই সময়জুড়ে বাতাস থেকে টেনে নেয় প্রচুর কার্বন ডাই-অক্সাইড।
 

শুধু বাতাস পরিশোধন নয়, তাপও শোষণ করে!

মস শুধু বায়ু বিশুদ্ধ করে না, এটি আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং সেই পানি বাষ্প হয়ে যাওয়ার সময় আশপাশ থেকে তাপ শুষে নেয়। এ প্রক্রিয়াকে বলে ইভ্যাপোরেটিভ কুলিং। এর ফলে আশপাশের অঞ্চল গবেষণায় প্রমাণিতভাবে ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ঠান্ডা থাকে।

এই বৈশিষ্ট্যের কারণে মসকে অনেকেই আজ বলছেন "প্রাকৃতিক এয়ার কন্ডিশনার"। গ্রীষ্মে উত্তপ্ত শহরকে ঠান্ডা রাখতে এটি একটি কম খরচে ও রক্ষণাবেক্ষণবিহীন সমাধান।
 

মস কেন শহরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

✔ পানি ও সার ছাড়া বেড়ে ওঠে

✔ নিজে নিজেই পুনরুৎপাদন করে

✔ শহরের দেয়াল, ছাদ, এমনকি ফুটপাথেও জন্মাতে পারে

✔ কার্বন নিঃসরণ কমাতে কার্যকর

✔  বায়ু পরিশোধন ও তাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
 

শহরের গ্রিন ইনফ্রাস্ট্রাকচারে মস- 

বিশ্বের বিভিন্ন শহরে ইতোমধ্যে গ্রিন ছাদ, গ্রিন ওয়াল গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে এসব স্থাপনায় মস অন্তর্ভুক্তির হার খুব কম। অথচ, মসের কার্যকারিতা প্রমাণিত-নিরবেই কাজ করে, কিন্তু ফলাফল রেখে যায় গভীর।

আমাদের শহরগুলো আজ এক ভয়াবহ তাপমাত্রা এবং দূষণের শিকার। মস সেই সবুজ সৈনিক, যাকে লাগানো লাগবে না-সে নিজেই জন্মাবে। কিন্তু দরকার, তাকে চিনে নেওয়া এবং ধ্বংস না করে রক্ষা করা।

যেখানে বড় বড় বৃক্ষ রোপণ করা সম্ভব নয়, সেখানে মস হতে পারে বিকল্প নয়, বরং স্মার্ট সমাধান। তার জন্য শহরের নীতিনির্ধারকদের দরকার, মসকে আর 'আবর্জনা' মনে না করে, নগরের পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোর অংশ হিসেবে দেখা।

সবুজ বলতে শুধু গাছ নয়, দেয়ালের পাতলা মসও শহরের ভবিষ্যৎ।

চাইলেই গড়ে উঠতে পারে এক নিঃশব্দ সবুজ বিপ্লব-মসের হাত ধরে।


সম্পর্কিত নিউজ