কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দাপটে কি হারাবে মানব সাংবাদিকতার অস্তিত্ব??

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) বিস্তার ও উৎকর্ষতা মানুষকে এক গভীর প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে-সংবাদ ও সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ কি কেবল মেশিনের হাতে সীমাবদ্ধ থাকবে? গত কয়েক বছরে AI-এর ক্ষমতা বেড়েছে এমন হারে, যা আগেকার দিনে কল্পনাও করা যেত না। আজকের দিনে, GPT-4, Bard, Claude-সহ আধুনিক AI টুলগুলো সংবাদ লেখা, তথ্য বিশ্লেষণ, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে অনুসন্ধানী কাজের খসড়া পর্যন্ত তৈরি করতে সক্ষম। তবে, প্রযুক্তির এই অগ্রগতির মাঝেও প্রশ্ন রয়ে গেছে-মানব সাংবাদিকতার মৌলিক স্বাতন্ত্র্য কি মুছে যাবে? নাকি AI শুধুমাত্র একটি শক্তিশালী সহযোগী হিসেবে কাজ করবে?
AI-র মাধ্যমে সংবাদ তৈরির বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষতা-
AI-এর অন্যতম বড় সুবিধা হলো বিশাল পরিমাণ ডেটা খুব দ্রুত বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা। কোটি কোটি তথ্য, বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর সংগ্রহ, এবং সেগুলোকে অর্থপূর্ণ করে তোলা AI-এর কাজ।
উদাহরণস্বরূপ, অর্থনীতি বা খেলার ফলাফল যেমন দ্রুত রিপোর্ট করা যায়, তেমনি একাধিক সংবাদ সূত্রের ক্রস-চেকিংও সহজ হয় AI-র মাধ্যমে।
তাছাড়া, AI-এর দক্ষতা স্বয়ংক্রিয় ফ্যাক্ট চেকিং এবং বড় পরিসরে তথ্য অনুসন্ধানে ব্যাপক সহায়তা করে। এটি সাংবাদিকদের সময় বাঁচায় এবং তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত করে। পরিসংখ্যান ও ইতিহাসের নির্ভুল তথ্য সরবরাহে AI অসাধারণ দক্ষ।
AI-এর সীমাবদ্ধতা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব-
তবে, সাংবাদিকতার মূল শক্তি যেখানে মানুষের অনুভূতি, ব্যাখ্যা ও নৈতিক বিচার, সেখানে AI এখনও সীমাবদ্ধ। মানব সাংবাদিকরা শুধু তথ্য পরিবেশন করেন না; তারা প্রেক্ষাপট বোঝেন, সংবেদনশীল ইস্যুতে সতর্কতা অবলম্বন করেন এবং সমাজে প্রভাব ফেলার জন্য গল্প বলেন। AI-এর কাছে এই সংবেদনশীলতা এবং নৈতিক দায়িত্ব এখনো অনুপস্থিত।
উদাহরণস্বরূপ, সামাজিক আন্দোলন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, বা রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো বিষয়গুলোতে সাংবাদিকদের গভীর অনুসন্ধান ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অপরিহার্য। AI কেবল তথ্য দেয়, কিন্তু ঐ তথ্যের নৈতিক মূল্যায়ন বা অনুষঙ্গিক বিশ্লেষণ করতে পারে না।
মানব সাংবাদিকতা ও AI একটি সমন্বিত ভবিষ্যৎ-
বিশ্বের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলো ইতিমধ্যে AI-কে সহযোগী হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। যেমন, খেলার স্কোর বা শেয়ার বাজারের আপডেটের জন্য AI নির্ভরযোগ্য। কিন্তু সেই সাথে অনুসন্ধানী রিপোর্ট, সাক্ষাৎকার, ও গভীর বিশ্লেষণ মানব সাংবাদিকরাই করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, AI কখনোই মানুষের সাংবাদিকতা প্রতিস্থাপন করতে পারবে না, বরং এটি সাংবাদিকদের সহায়ক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। AI দ্রুত ডেটা সংগ্রহ ও প্রাথমিক খসড়া তৈরি করবে, আর মানব সাংবাদিকগণ তাতে প্রাণবন্ততা যোগ করবে, মানবিকতা বুলেটিনে আনা সহ।
চ্যালেঞ্জ ও উদ্বেগ
AI-এর প্রভাব নিয়ে কিছু উদ্বেগও রয়েছে। যেমন, স্বয়ংক্রিয় সংবাদ উৎপাদনের মাধ্যমে গুণগত মানের পতন, বাতিল বা পক্ষপাতমূলক তথ্য ছড়ানো এবং সাংবাদিক পেশার সংকট। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের জন্য নতুন ধরনের দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে গেছে।
অন্যদিকে, AI-র ব্যবহার স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার বিষয়েও কঠোর নীতিমালা তৈরি করা জরুরি, যেন তথ্যের বিকৃতি বা ভুল বোধগম্যতা সৃষ্টি না হয়।
AI যেমন একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি, তেমনি মানব সাংবাদিকতা হল সত্য ও ন্যায়ের রক্ষক। আগামী দিনে, এই দুটির সমন্বিত ব্যবহার সংবাদ জগতকে আরও শক্তিশালী, কার্যকর এবং বিশ্বস্ত করবে।
সুতরাং, প্রশ্ন হবে না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানুষের জায়গা নেবে? বরং হওয়া উচিত, কিভাবে মানুষ ও মেশিন মিলে সত্যের অনুসন্ধানে আরও অগ্রসর হবে। কারণ, সংবাদ মানে কেবল তথ্য নয়; তা হলো মানব সমাজের আস্থা, নৈতিকতা ও ঐক্যের প্রতীক।
সংক্ষেপে, AI-র প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও মানব সাংবাদিকতার নৈতিক দায়বদ্ধতা একত্রে সংবাদ জগতকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে - যেখানে প্রযুক্তি এবং মানবিকতা মিলেই থাকবে সংবাদকারীর আসল শক্তি।