স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ানোর জন্য পড়ার সেরা উপায়

স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ানোর জন্য পড়ার সেরা উপায়
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বর্তমান যুগে তথ্যের স্রোত যেন অবারিত নদীর মতো বয়ে চলেছে। আর সেই তথ্যের প্রবাহ থেকে নিজের জন্য দরকারী জ্ঞান নির্বাচন ও আত্মস্থ করার ক্ষেত্রে বই পড়ার গুরুত্ব অমোঘ। কিন্তু শুধু বই হাতে নিলেই কি যথেষ্ট? বৈজ্ঞানিক গবেষণা স্পষ্ট জানাচ্ছে-বই পড়ার ফলপ্রসূতা নির্ভর করে পড়ার সঠিক সময়, উপযুক্ত পরিবেশ এবং মনোযোগের অবস্থা উপর।

মস্তিষ্কের প্রস্তুতি ও পড়ার সেরা সময়

মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা দিনের বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম দু'ঘণ্টা মস্তিষ্কে কোর্টেক্স তথা চিন্তা ও স্মৃতির কেন্দ্র অত্যন্ত সক্রিয় থাকে। এই সময়ে নতুন তথ্য শিখতে মস্তিষ্ক সর্বোচ্চ প্রস্তুত। তাই সকালের এই শান্ত সময় বই পড়া মানে তথ্য মনে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

তবে যারা রাতের মানুষ, তাদের জন্য রাতের নিরবতা ও শান্তি বিশেষ উপযোগী। রাতে মস্তিষ্কের কিছু অংশ যেমন সেরেব্রাম ক্রিয়াশীল থাকে যা গভীর চিন্তা ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহ দেয়। তবে রাতে পড়ার সময় অবশ্যই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে, কারণ চোখের ক্লান্তি পড়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
 

পরিবেশ: পড়ার জন্য আদর্শ সেটিং

বাইরের গোলমাল, টেলিফোনের আওয়াজ, বা কম্পিউটারের নোটিফিকেশন সহজেই মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই এমন পরিবেশ নির্বাচন করা জরুরি যেখানে নিরবতা এবং স্বাচ্ছন্দ্য বজায় থাকে।

বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা অনুসারে, প্রাকৃতিক আলোয় পড়ার অভিজ্ঞতা চোখের ওপর চাপ কমায় এবং মস্তিষ্কের চেতনা উন্নত করে। যথাযথ বাতাস চলাচল ও স্বচ্ছন্দ আসনের ব্যবস্থা পড়ার মান বাড়ায়। পড়ার ঘর বা নির্দিষ্ট কোনো কোণ যেখানে ডিস্ট্র্যাকশন কম, সেটিই আদর্শ।

সঙ্গে সঙ্গীত? অনেকেই নরম, ধীর গতির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক মনোযোগ বাড়ায় বলে অভিজ্ঞতা জানান। তবে এই অভ্যাস ব্যক্তিভেদে ভিন্ন। তাই নিজেকে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই ভালো।
 

মনোযোগের সীমা ও পড়ার পদ্ধতি

মস্তিষ্ক গড়ে ২০-৪০ মিনিট একটানা ফোকাস করতে সক্ষম, এর পরে ক্লান্তি শুরু হয়। এক্ষেত্রে 'Pomodoro Technique' নামক পদ্ধতি ব্যাপক জনপ্রিয় - ২৫ মিনিট পড়া, ৫ মিনিট বিরতি। এই সাইকেল পুনরাবৃত্তি করলে মনোযোগ এবং তথ্য গ্রহণের দক্ষতা বেড়ে যায়।

বিরতির সময় চোখের ব্যায়াম, হালকা হাঁটা বা কয়েকটি শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মনকে পুনরুজ্জীবিত করে।
 

কফি, চা ও সুগন্ধ: মস্তিষ্কের সঙ্গী?

মাঝেমধ্যে হালকা চা বা কফি মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে কারণ এতে ক্যাফেইন থাকে, যা স্নায়ুতন্ত্র উদ্দীপিত করে। কিন্তু অতিরিক্ত গ্রহণ করলে অস্থিরতা বাড়িয়ে পড়াশোনায় বাধা দিতে পারে।

আরো একটি মনোবিদ্যার দৃষ্টিভঙ্গি হলো, কিছু নির্দিষ্ট সুগন্ধ যেমন ল্যাভেন্ডার বা পুদিনা ঘ্রাণ মস্তিষ্কের প্রশান্তি বাড়ায়, যার ফলে পড়ার সময় মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
 

প্রযুক্তির যুগে পড়ার পরিবেশ

ডিজিটাল স্ক্রিনের সামনে দীর্ঘক্ষণ থাকলে চোখের ক্লান্তি ও মস্তিষ্কের ভীষণ চাপ সৃষ্টি হয়, যা তথ্য ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই ই-বুক পড়লেও নির্দিষ্ট বিরতি নেওয়া উচিত। এছাড়াও, ফোন এবং অন্যান্য ডিভাইসের নোটিফিকেশন বন্ধ রেখে পড়া প্রয়োজন।

সঠিক সময়, উপযুক্ত পরিবেশ এবং ব্যক্তিগত শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি মিলেই পারে বই পড়ার সার্থকতা। জ্ঞান আহরণের প্রক্রিয়ায় শুধু বই নয়, আমাদের মন ও মস্তিষ্ককেও প্রস্তুত করতে হয়।

স্মৃতিতে গেঁথে থাকা তথ্য, নতুন চিন্তা আর গভীর উপলব্ধি-সবই আসে সঠিক সময় ও পরিবেশের মেলবন্ধনে। তাই বই পড়ার পরিকল্পনা করুন বুদ্ধিমানের মতো, কারণ জ্ঞান অর্জনের যাত্রা কখনোই অযথা নয়।


সম্পর্কিত নিউজ