ডিহাইড্রেশন কি আমাদের জন্য গোপন হুমকি?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
জীবনের এক অপরিহার্য উপাদান-পানি। আমাদের দেহের প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ অংশ পানির গঠন, যা শরীরের সব অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু যখন শরীর থেকে পানি কমে যায়, তখন শুরু হয় 'ডিহাইড্রেশন' বা দেহের পানির অভাবের সমস্যা, যা শুধু ক্লান্তি নয়, বরং জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করতে পারে।
ডিহাইড্রেশন মূলত ঘটে যখন শরীর থেকে শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি হারিয়ে যায়-
যা হতে পারে ঘাম, প্রস্রাব, বমি, ডায়রিয়া বা অপর্যাপ্ত পানি পান করার কারণে। শারীরিক তরলহীনতা কোষ স্তরে প্রভাব ফেলে, যার ফলে পুষ্টি সরবরাহ ও বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে তীব্র মাথাব্যথা, চরম দুর্বলতা, চোখ ঝাপসা দেখা, ঘুম কমে যাওয়া এবং মূত্রের রঙ গাঢ় হলুদ থেকে বাদামী রঙে পরিণত হয়।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে, শরীরের মাত্র ১-২ শতাংশ পানির অভাবই স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা প্রভাবিত করে, মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। ৫ শতাংশ কম পানি শরীরের পেশী সংকোচন ও ক্ষয় ঘটাতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনির সমস্যা ডেকে আনে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হল ১০ শতাংশ বা তার বেশি ডিহাইড্রেশন, যা কখনো কখনো অজ্ঞানাবস্থা, শক এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
পানির ভূমিকা শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অপরিসীম। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ করে, এবং ওষুধ ও পুষ্টি উপাদান বহন করে কোষগুলোতে পৌঁছে দেয়। এছাড়াও, পানি রক্তের ঘনত্ব বজায় রাখতে ও সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স, ওজন, আবহাওয়া এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপ অনুযায়ী শরীরের পানি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হয়। গরমের মৌসুমে বা ভারী শারীরিক পরিশ্রমের সময় শরীরের পানিশূন্যতা দ্রুত ঘটে, তাই প্রতি ঘণ্টায় পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ফলমূল, যেমন তরমুজ, কমলা এবং শসা, শরীরের পানি পূরণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিন সরবরাহ করে যা ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।
তবে পানি পান করাটাই একমাত্র সমাধান নয়; সামঞ্জস্যপূর্ণ খাদ্যাভাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ডিহাইড্রেশনের প্রাথমিক লক্ষণ যেমন মুখের শুষ্কতা, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, মাথা ঘোরা ও দুর্বলতা বুঝে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াই প্রয়োজন। শিশু, বয়স্ক এবং গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি গুরুতর হতে পারে, তাই তাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি।
বর্তমান যুগে নানা ধরনের পানীয় ও শরবত পাওয়া গেলেও, বিশুদ্ধ পানিই সর্বোত্তম। চিনি বা ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয়গুলো শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে পারে, তাই সেগুলো ব্যবহার সীমিত করা উচিত। শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
সুতরাং, ডিহাইড্রেশন শুধু এক ধরনের শারীরিক অবস্থা নয়, এটি একটি জ্ঞাত এবং নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি, যা সঠিক তথ্য ও সচেতনতা থাকলেই কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিয়মিত পানি পান ও সুষম খাদ্যাভাসকে জীবনধারার অংশ করে নিলে, আমরা ডিহাইড্রেশনের কঠিন ছায়া থেকে রক্ষা পেতে পারি।
সংক্ষেপে, জীবনদায়ী পানি যেন শরীরের প্রতিটি কোষে সঠিক সময়ে পৌঁছায়-তাই ডিহাইড্রেশন সম্পর্কে জেনে রাখা এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা আজকের সময়ের এক জরুরি স্বাস্থ্যচেতনা।