আদার ইতিহাস, বৈজ্ঞানিক গুণ ও শরীর-ত্বকের জন্য উপকারিতা

আদার ইতিহাস, বৈজ্ঞানিক গুণ ও শরীর-ত্বকের জন্য উপকারিতা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আদা, যা শুধু একটি মসলা নয়, বরং বহু শতাব্দীর ঐতিহ্য ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত এক অনন্য প্রাকৃতিক ঔষধ। মধ্যযুগে ইউরোপে আদার দাম ছিল এতটাই উঁচু, যে এক পাউন্ড আদার মূল্য ছিল এক ভেড়ার সমান-অর্থাৎ, এটি ছিল সোনার মতো মূল্যবান। এই সময়ের বাণিজ্যিক গুরুত্বই বোঝায় আদার প্রাচীনকালের বিশেষ মর্যাদা, যা এখনো তার স্বাস্থ্যগত গুণাবলীর কারণে অমূল্য।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে, আদার খাদ্যতালিকায় থাকা বিশেষ উপাদান 'জিঞ্জেরল' প্রদাহ-নাশক হিসেবে কাজ করে। কাঁচা আদা শরীরের প্রদাহ ও পেশীর ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর, যা আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন প্রদাহজনিত রোগের উপশমে সহায়তা করে। অন্যদিকে, রান্না করা আদার মধ্যে থাকা 'শোগল' যৌগ পেটে হজমশক্তি বাড়ায়, গ্যাস কমায় এবং পাচনতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে সচল রাখে। তাই রান্নার ধরণ অনুযায়ী আদার প্রভাব পরিবর্তিত হয়, যা খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

আদার স্বাস্থ্যকর ব্যবহার শুধু খাবারে সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বজুড়ে আদা দিয়ে তৈরি করা 'জিঞ্জার বিয়ার' বা 'জিঞ্জার অ্যাল' একটি জনপ্রিয় কোমল পানীয়, যা মূলত আদার স্বাদ ও তার হজমশক্তিবৃদ্ধিকারী গুণের জন্য বিখ্যাত। বিশেষ করে জার্মানি ও ব্রিটেনে এই পানীয় স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়।

ত্বকের যত্নেও আদার গুরুত্ব অপরিসীম। আদায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনকে উৎসাহিত করে, ফলে ত্বক তরতাজা থাকে এবং বলিরেখা, বয়সের ছাপ ধীরে ধীরে কমে। নিয়মিত আদার ব্যবহার ত্বকের রঙ উজ্জ্বল এবং একরূপ রাখতে সাহায্য করে, যা বহু প্রাকৃতিক স্কিনকেয়ার পণ্যে অন্তর্ভুক্ত।

আরেকটি আশ্চর্যকর বৈশিষ্ট্য হলো মোশন সিকনেস বা যাত্রাবিহারে বমির অনুভূতি কমানোতে আদার ভূমিকা। গাড়ি, নৌকা বা বিমানে যাত্রার সময় যাদের বমি হয়, তাদের জন্য আদার কার্যকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। আদার উপাদান মস্তিষ্কের সেই অংশকে প্রভাবিত করে যা বমির সংকেত নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে আদা চিবিয়ে খেলে বা ক্যাপসুল গ্রহণ করলে বমির উপসর্গ কমে।

এমনকি আধুনিক গবেষণায় আদার আরও নানা স্বাস্থ্যগুণ উঠে এসেছে, যেমন রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। তাই আদাকে শুধু রান্নার মসলা হিসেবে নয়, বরং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করাই বর্তমান সময়ের প্রজ্ঞা।

সুতরাং, আদার এককথায় বিশাল ভূমিকা মানব জীবনে - প্রাচীন ইতিহাস থেকে শুরু করে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি প্রমাণিত এক বিস্ময়কর উপাদান। রান্নাঘর থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে আদার উপস্থিতি আমাদের শরীর ও ত্বকের যত্নে অমূল্য অবদান রাখছে।


সম্পর্কিত নিউজ