শিশুদের বদনজর থেকে রক্ষার ইসলামী বিধান

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
শিশুরা পরিবারে আলোর ঝলকানি। তাদের হাসি-খুশি, সুরক্ষিত বেড়ে ওঠা প্রত্যেক পিতামাতার স্বপ্ন। কিন্তু অনেক সময় তারা অজানা কারণেই অসুস্থতা, মন খারাপ বা আচরণে পরিবর্তন দেখাতে পারে। ঐতিহ্যগত ও বৈজ্ঞানিক উভয় প্রেক্ষাপটে এর অন্যতম কারণ হতে পারে "বদনজর" বা "কুনজর"।
বদনজর কি?
ইসলাম স্পষ্টত বদনজরকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। হাদীসে পুত্রহাসান ও হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য নবী করিম (সা.) এই কথা বলেছেন:
"আল-আয়নু হাক্কুন" - বদনজর সত্য। (সহীহ মুসলিম)
বিজ্ঞান আজকের দিনে স্বীকার করে, মানুষের দৃষ্টির প্রভাব নিয়ে অবচেতনভাবেই শারীরিক ও মানসিক প্রভাব পড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত প্রশংসা বা হঠাৎ কোনো ব্যক্তির দৃষ্টি যদি শিশুর প্রতি খুব বেশি কেন্দ্রিত হয়, তা মানসিক চাপ বা উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে, যা পরোক্ষভাবেই শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বদনজর থেকে রক্ষার জন্য ইসলামের সুনির্দিষ্ট দোয়া ও আমল
বদনজর থেকে সুরক্ষার জন্য নবী করিম (সা.) যে দোয়া নিয়মিত পড়তেন, তা হচ্ছে:
"আউযু বি কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক"
অর্থ: "আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কথাগুলোর মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টি সকল অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।" (তিরমিজি)
হাদীসে বর্ণিত, নবী (সা.) তাঁর শিশুদের ওপর এই দোয়াটি পড়ে ফুঁ দেওয়া ও তাদের দেহে স্পর্শ করতেন। এই দোয়া এক ধরনের আধ্যাত্মিক সুরক্ষা ঢাল হিসেবে কাজ করে।
কীভাবে শিশুকে বদনজর থেকে রক্ষা করবেন?
⇨ দোয়া পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলা: দিনে অন্তত দুইবার—সকাল-সন্ধ্যায় শিশুদের ওপর দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে দেওয়া।
⇨ কুরআনের সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়া: এই সূরা দুটো সমস্ত শারীরিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
"মাশাআল্লাহ" বলা: শিশুর প্রশংসা করার সময় বা অন্য কেউ প্রশংসা করলে অবশ্যই "মাশাআল্লাহ" বলে প্রশংসাকে হোক রক্ষা।
⇨ অতিরিক্ত প্রশংসা বা ঈর্ষা এড়ানো: বিশেষ করে অপরিচিত বা হিংসুক মানুষের সামনে শিশুকে অতিরিক্ত প্রশংসা এড়ানো।
⇨ বিশ্বাস ও ইতিবাচক মনোভাব: বদনজর নিয়ে ভয়ের পরিবর্তে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা এবং সঠিক আমল করা।
কেন বদনজর নিয়ে ভয় করা উচিত?
বদনজর শুধুমাত্র ইসলামিক বিশ্বাস নয়, এটি মানব মনস্তত্ত্বের একটি বাস্তব দিক। অজ্ঞাত কিংবা অতিরিক্ত দৃষ্টি শিশুর মানসিক অবস্থা খারাপ করতে পারে। শিশুর নরম হৃদয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে সে বঞ্চিত বোধ করতে পারে বা স্বাস্থ্যে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ইসলামের নির্দেশিত দোয়া ও আমলগুলো শিশুকে মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সুরক্ষিত রাখে।
চিকিৎসা ও আধ্যাত্মিক সুরক্ষার সমন্বয়
আজকের যুগে বদনজরকে শুধু আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে না দেখে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সঙ্গেও মিলিয়ে দেখা প্রয়োজন। কোনো শিশুর আকস্মিক অসুস্থতা বা আচরণ পরিবর্তন হলে প্রথমেই চিকিৎসা নেওয়া আবশ্যক। একই সঙ্গে, ইসলামী দোয়া ও আমল প্রয়োগ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক শান্তি এনে দেয়।
শিশুদের বদনজর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইসলামের সুপ্রাচীন দোয়া ও আমল আজও সমান প্রাসঙ্গিক ও কার্যকর। এই দোয়া ও আমল মেনে চলা শুধু শারীরিক সুরক্ষাই নয়, মানসিক শান্তি ও আত্মিক সুস্থতাও নিশ্চিত করে। তাই পিতামাতা ও অভিভাবকদের উচিত এসব সঠিক দিকনির্দেশনা মেনে শিশুদের সুস্থ ও সুখী বড় হওয়ার পথ সুগম করা।
সূত্র: সহীহ হাদীস: তিরমিজি, মুসলিম, আহমাদ | ইসলামী চিকিৎসা বিজ্ঞান | আধুনিক গবেষণা