একটি শিশুর সাফল্যের পেছনে কেবল শিক্ষক নয়, সবচেয়ে বড় কারিগর-তার পরিবার

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বর্তমান সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন উপলব্ধি স্পষ্ট হয়ে উঠছে: শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক যতটা গুরুত্বপূর্ণ, অভিভাবকের অংশগ্রহণ তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদানই যথেষ্ট নয়-ছাত্রের মানসিকতা, আত্মবিশ্বাস, দায়িত্ববোধ ও সামাজিকতা তৈরিতে পরিবারের ভূমিকা আজ শিক্ষা-গবেষকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
পরিবারই শিশুর প্রথম ও স্থায়ী শিক্ষালয়
বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষকদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনের ৭৫ শতাংশ ভিত্তি স্থাপিত হয় বয়স ৬ বছরের মধ্যেই-এবং এই সময়টিই মূলত কাটে পরিবারে। শিশুরা যেভাবে কথা বলে, চিন্তা করে বা সমস্যা সমাধান করে-তা অনেকাংশে নির্ধারিত হয় তার পারিপার্শ্বিক পারিবারিক পরিবেশ দ্বারা।
একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, "যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনায় আগ্রহী, নিয়ম মেনে চলে এবং শ্রদ্ধাশীল আচরণ করে, তাদের পেছনে সবসময়ই সচেতন ও সহানুভূতিশীল অভিভাবক থাকেন।"
অভিভাবক সচেতনতা না থাকলে শিক্ষার কাঠামো দুর্বল-
অভিভাবকদের উপেক্ষা বা অমনোযোগী আচরণই অনেক সময় শিশুর পড়াশোনায় আগ্রহ হারানোর মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের একাংশে এখনো এমন মানসিকতা দেখা যায়—"স্কুলে পাঠিয়ে দিলেই দায়িত্ব শেষ।"
এই ধরনের মনোভাব শিশুদের শুধু একাডেমিক দুর্বলতায় ফেলেই না, বরং মানসিকভাবে একঘরে করে ফেলে। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থী পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়লে অধিকাংশ সময় অভিভাবকরা দোষ চাপান স্কুল বা শিক্ষকের ওপর—যেখানে বাস্তবতা হচ্ছে, বাড়ির সহযোগিতাই ছিল অনুপস্থিত।
সময় দাও, ফলাফল বদলে যাবে
গবেষণাভিত্তিক তথ্য বলছে-শুধু ১৫-২০ মিনিট সময় ব্যয় করে সন্তানের পড়া মনোযোগ দিয়ে শুনলে, তার শেখার হার ৩০% পর্যন্ত বাড়তে পারে। শিশুরা তখন তাদের চিন্তা-ভাবনা প্রকাশে আগ্রহী হয়, ভুল করার ভয় কমে, এবং প্রশ্ন করার সাহস পায়। এতে করে তাদের বিশ্লেষণী দক্ষতা বাড়ে, যা ভবিষ্যতের যেকোনো উচ্চপর্যায়ের শিক্ষায় সহায়ক হয়।
প্রযুক্তি যুগে যৌথ দায়িত্ব জরুরি
বর্তমানে অনেক শিশুই মোবাইল, ট্যাব ও ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পড়ছে। এক্ষেত্রে অভিভাবকের দায়িত্ব আরও বেড়েছে—শুধু প্রযুক্তি সরবরাহ নয়, তার যথাযথ ব্যবহার তদারকি করাও অভিভাবকের ভূমিকার অন্তর্ভুক্ত।
শিক্ষকরা বলছেন, "ঘরে যদি শেখার উপযোগী পরিবেশ তৈরি না হয়, শ্রেণিকক্ষে জ্ঞান দেওয়ার প্রক্রিয়াটাও দুর্বল হয়ে পড়ে। অভিভাবক-শিক্ষক যদি একত্রে কাজ করেন, তবেই একটি শিশুর পূর্ণ বিকাশ সম্ভব।"
পরিসংখ্যান ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক বাস্তবতায় স্পষ্ট-একজন শিক্ষক যতই দক্ষ হোন না কেন, অভিভাবকের সহযোগিতা ছাড়া শিক্ষার গন্তব্যে পৌঁছানো দুরূহ। তাই সময় এসেছে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে 'বিদ্যালয়-কেন্দ্রিক' চিন্তাধারার বাইরে এনে, পরিবার-নির্ভরতায় আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার।
একটি শিশুর ভবিষ্যৎ গড়তে হলে, প্রথমেই গড়তে হবে তার ঘর। আর সেই ঘরের ভিত শক্ত হলে তবেই স্কুলের দেয়াল হবে শিক্ষার সত্যিকার স্তম্ভ।