গাছ কিভাবে প্রকৃতির চরম চাপ সহ্য করে বেঁচে থাকে?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
প্রকৃতির নানা চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে গাছেরা নিঃশব্দে সংগ্রাম করে জীবনের জন্য। তারা কথা বলতে পারে না, চলাফেরা করতে পারে না, তবুও পারদর্শীতার সঙ্গে পরিবেশগত চাপ সামলাতে শিখেছে-এটাই হলো উদ্ভিদের 'স্ট্রেস ফিজিওলজি' বা চাপ সামাল দেওয়ার শারীরবৃত্তীয় গূঢ় কৌশল।
আজকের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে এই বিষয়টি মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষত যখন জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ বাড়ছে।
প্রথমেই বুঝতে হবে-গাছের ওপর কেমন ধরনের চাপ আসে? সবচেয়ে সাধারণ হলো:
- জলস্বল্পতা বা খরার সময় পানির অভাব
- অতিরিক্ত লবণাক্ত মাটি (সলাইনিটি)
- অত্যধিক তাপ বা তাপমাত্রার ওঠানামা
- দূষিত বায়ু ও ভারী ধুলো কণিকা
- অতিরিক্ত বা কম আলো
- ভূমিকম্প, ঝড় বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ
- এইসব চাপ গাছের কোষগুলোর অভ্যন্তরে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটায়।
উদাহরণস্বরূপ, যখন পানির অভাব হয়, গাছের পাতা ও শিকড়ের কোষগুলো 'অসিমিলেশন' কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ শক্তি উৎপাদন সীমিত করে। তারা 'স্টোমাটা' নামক ছোট ছোট ফুসকুড়িগুলো বন্ধ করে দেয়, যাতে জলীয় বাষ্প কম বাহির হয়। এই সময় গাছ শুষ্ক থেকে বাঁচার জন্য 'অবসকট্যান্ট' ও 'প্রোটেকটিভ প্রোটিন' তৈরি করে, যা কোষকে রক্ষা করে।
একইভাবে, অতিরিক্ত লবণ মাটিতে থাকলে, গাছ 'আইন হোমিওস্টাসিস' বজায় রাখতে বিশেষ আয়ন নির্গমন বন্ধ করে দেয়। এ সময় গাছের কোষে 'অক্সিডেটিভ স্ট্রেস' তৈরি হয়, যা কোষের ক্ষতি করতে পারে। তবে গাছের কোষে তৈরি হয় 'অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট' এনজাইম ও ম্যাক্রোমলিকিউল, যা রিঅ্যাকটিভ অক্সিজেন স্পিসিস (ROS) নামক ক্ষতিকারক উপাদানকে নিরপেক্ষ করে। এগুলো গাছের নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থার অংশ।
আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গাছের সিগন্যালিং সিস্টেম। যখন কোনো অংশে চাপ পড়ে, তখন সেই সংকেত রাসায়নিক বার্তায় অন্য অংশে পৌঁছায়। যেমন শিকড়ের সমস্যা পাতা পর্যন্ত পৌঁছালে গাছ পুরো দেহে অভিযোজনমূলক ব্যবস্থা নেয়। এতে করে গাছ দ্রুত তার জীবনীশক্তি পুনঃসামঞ্জস্য করতে পারে।
গাছের জিনগত স্তরে এমনকি 'ইপিজেনেটিক' পরিবর্তনও ঘটে। অর্থাৎ চাপের কারণে জিনের কার্যকারিতা সাময়িক বা স্থায়ীভাবে পরিবর্তিত হয়, যা পরবর্তী প্রজন্মকেও প্রভাবিত করতে পারে। এটি গাছের অভিযোজনের আরেকটি রহস্যময় দিক, যা বিজ্ঞানীরা দ্রুত অনুসন্ধান করছেন।
বিশ্বজুড়ে যখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে, তখন এই 'স্ট্রেস ফিজিওলজি' বিষয়ক গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ, বুঝতে হবে কিভাবে গাছ এই চরম পরিবেশে টিকে থাকে এবং কিভাবে আমরা কৃষি ও বনজসম্পদকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।
পরিশেষে বলা যায়, গাছের জীবনীশক্তি ও অভিযোজন ক্ষমতা প্রকৃতির সবচেয়ে বড় বিস্ময়। নিঃশব্দ এই সবুজ যোদ্ধারা পৃথিবীর অবিচল রক্ষক, যারা প্রতিনিয়ত দুঃসহ পরিবেশগত চাপ সইয়ে মানব জীবনের জন্য অক্সিজেন, খাদ্য ও আশ্রয় প্রদান করে চলেছে।
সূত্র: আধুনিক উদ্ভিদবিজ্ঞান ও পরিবেশ বিজ্ঞান গবেষণাগারসমূহের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনসমূহ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।