নিদ্রাহীনতা কেন আজকের যুগের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যহুমকি?

নিদ্রাহীনতা কেন আজকের যুগের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যহুমকি?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমাদের জীবনযাত্রার গতি দিন দিন দ্রুত হচ্ছে, প্রযুক্তির ছোঁয়া জীবনের প্রতিটি কোণে পৌঁছেছে। কিন্তু এ সকল উন্নতির মাঝে এক নীরব বিপর্যয় আমাদের ঘিরে জড়ো হচ্ছে-নিদ্রাহীনতা বা ইনসমনিয়া। ঘুমের অভাব শুধু ক্লান্তি নয়, এটি আসলে মানুষের শরীর ও মনের উপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা আজ বৈজ্ঞানিক জগতে এক বড় স্বাস্থ্য সংকট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

নিদ্রাহীনতার গভীর কারণ: নিদ্রাহীনতার মূল চাবিকাঠি হলো আমাদের মস্তিষ্কের জৈবিক ছন্দের বিঘ্ন। সাধারণত, ঘুম-জাগরণের নিয়ন্ত্রণে থাকে মেলাটোনিন হরমোন, যা রাতের অন্ধকারে নিঃসৃত হয়। কিন্তু আধুনিক জীবনে রাত জাগা, অনিয়মিত কাজের সময়সূচী, এবং দীর্ঘ সময় স্ক্রীনের সামনে বসে থাকা মেলাটোনিন নিঃসরণের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় মানসিক চাপ, উদ্বেগ, ডিপ্রেশন, যা নিদ্রাহীনতাকে আরও ঘনিয়ে তোলে।

এছাড়া কিছু শারীরিক কারণ যেমন:

◑ ঘুমের সময় শ্বাসনালীর বাধা (স্লিপ অ্যাপনিয়া),

◑ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা,

◑ হার্টের সমস্যা,

◑ থাইরয়েডের অতিসক্রিয়তা,

◑ বিভিন্ন ধরনের ব্যথা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগও নিদ্রাহীনতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
 

শারীরিক ও মানসিক প্রভাব: শরীরে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে, মস্তিষ্কের নিউরোনের মধ্যে যোগাযোগ দুর্বল হয়। এই দুর্বলতায় স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মনোযোগ হারায় মানুষ, যা কর্মদক্ষতা ও সৃজনশীলতাকে ব্যাহত করে। দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাব হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। মেজাজে ওঠানামা, উদ্বেগ, হতাশা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ঘটায় এটি। এমনকি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ইনসমনিয়ায় ভোগা ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষও ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে পারে।
 

নিদ্রাহীনতা ও প্রযুক্তি: আধুনিক যুগের দ্বৈরথ স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও ল্যাপটপের স্ক্রীন থেকে নির্গত নীল আলো মেলাটোনিন নিঃসরণ বন্ধ করে ঘুমের গুণগতমান খারাপ করে। অনলাইন কাজের চাপ ও সামাজিক যোগাযোগের অতিরিক্ত সময় নিয়ন্ত্রণহীন নিদ্রাহীনতার প্রবণতা বৃদ্ধি করে।
 

প্রতিকার ও প্রতিরোধ: নিদ্রাহীনতা প্রতিরোধের জন্য জীবনধারায় কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনা জরুরি। বিজ্ঞান সমর্থিত কিছু উপায় হলো-

- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ওঠা,

- রাতের খাবার হালকা রাখা ও ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়ানো,

- রাতের আধায়েক ঘণ্টা আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ রাখা,

- নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধ্যান-মেডিটেশন,

ঘুমের পরিবেশ অন্ধকার, শান্ত এবং ঠাণ্ডা রাখা।

- কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত অভ্যাসের পরিবর্তনে অনেকেই ইনসমনিয়ার উন্নতি দেখতে পান।
 

নিদ্রাহীনতা আজ শুধু একটি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সমস্যা নয়; এটি সমগ্র সমাজের জন্য একটি জটিল চ্যালেঞ্জ। ঘুমের গুরুত্বকে বুঝে জীবনে প্রাধান্য দেওয়া না হলে, আধুনিকতার এই অন্ধকার গন্তব্যে আমরা আরো দুর্বল হয়ে পড়ব। তাই নিজেকে এবং প্রিয়জনদের জন্য ঘুমের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি-কারণ ভালো ঘুমেই বাঁচে ভালো জীবন।


সম্পর্কিত নিউজ