বই পড়া কীভাবে বাড়ায় সোশ্যাল স্কিল ,বদলে দেয় মানুষের আচরণ ও সম্পর্কের ভাষা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বই শুধু মনের খোরাকই নয়, মানুষে মানুষে সম্পর্কের সেতুবন্ধনেও একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। আধুনিক মনোবিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞানের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, নিয়মিত বই পড়া শুধু জ্ঞান নয়, মানবিক বোধ, সহানুভূতি ও সামাজিক বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
বিশেষত সাহিত্যের বই-যেখানে চরিত্র, সংলাপ, দ্বন্দ্ব ও পারস্পরিক সম্পর্ক ফুটে ওঠে-এই ধরনের পাঠকরা বাস্তব জীবনে অন্যদের অনুভূতি বুঝতে ও সামাজিক পরিস্থিতিতে সংবেদনশীলভাবে সাড়া দিতে আরও সক্ষম হন। গবেষণাভিত্তিক পর্যবেক্ষণ বলছে, যারা নিয়মিত পাঠ করেন, তাদের মধ্যে কথাবার্তার সৌজন্য, সহমর্মিতা, ও অনুকরণশীলতা তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়।
স্নায়ুবিজ্ঞানে "mirror neurons" নামে পরিচিত কিছু নিউরন থাকে, যা অন্যের আচরণ বা অনুভূতি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের মস্তিষ্কে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সাহিত্যপাঠের মাধ্যমে এই নিউরনগুলো আরও সক্রিয় হয়, ফলে পাঠকের সামাজিক ও আবেগীয় অনুধাবন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। একে বলা হয় 'ন্যারেটিভ ট্রান্সপোর্টেশন', অর্থাৎ গল্পের ভেতরে প্রবেশ করে পাঠক বাস্তব জীবনের মতো মানসিক প্রতিক্রিয়া দেখায়।
এছাড়াও, পাঠাভ্যাস উন্নত করে কমিউনিকেশন স্কিল। একটি ভালো বই পড়ার পর পাঠক নতুন শব্দ, বাক্যগঠন ও ভাব প্রকাশের কৌশল আত্মস্থ করেন, যা পরে বাস্তব কথোপকথনে প্রয়োগ হয়। ফলস্বরূপ, আত্মবিশ্বাসও বাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল যুগে যদিও তথ্য সহজলভ্য, তবুও বইয়ের ধীর-গভীর পাঠে যে মননচর্চা ও সংবেদনশীলতা গড়ে ওঠে, তা সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদে ফলদায়ক।
অতএব, বই পড়া কেবল জ্ঞানার্জনের মাধ্যম নয়, বরং একে সমাজিক দক্ষতার প্রশিক্ষণ বললেও অত্যুক্তি হয় না।
সোশ্যাল স্কিল বাড়াতে বই পড়া একটি কার্যকর ও প্রমাণিত উপায়। এটি শুধু জ্ঞান বাড়ায় না, বরং মানুষের হৃদয় ও মনোভাবকে মানবিক ও সংবেদনশীল করে গড়ে তোলে। তাই, নিজের সামাজিক দক্ষতা উন্নত করতে নিয়মিত বই পড়াকে অবশ্যকভাবে জীবনযাত্রার অংশ করতে হবে।