বিষয়ভিত্তিক ইউটিউব শিক্ষা কনটেন্ট: শিক্ষার্থীরা কতটা উপকৃত হচ্ছে?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
এক সময় শিক্ষা মানে ছিল-শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক, সাদা বোর্ড, আর বইয়ের পাতা উল্টানো। এখন সেই দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। কারণ, শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠশালা এখন ইউটিউব। স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই একজন শিক্ষার্থী বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে নিজের পছন্দের বিষয়ের ওপর দক্ষতা অর্জন করতে পারছে।
বিশ্বজুড়ে ইউটিউব হয়ে উঠেছে জ্ঞানের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন প্রায় ১০ কোটিরও বেশি মানুষ ইউটিউব ব্যবহার করছে শিক্ষামূলক কনটেন্ট দেখার জন্য। বাংলাদেশেও এই প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা, ভর্তি প্রস্তুতি থেকে চাকরি পরীক্ষা-প্রত্যেক স্তরে ইউটিউব কনটেন্ট শিক্ষার্থীদের জন্য হয়ে উঠেছে নতুন সহযাত্রী।
কোন কোন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উপকার?
- পাঠ্যবিষয়ক বোঝাপড়া: জটিল বিষয় যেমন গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন-এগুলো ইউটিউবে অ্যানিমেশন ও রিয়েল-টাইম উদাহরণে ব্যাখ্যা করায় অনেক শিক্ষার্থী সহজে বুঝতে পারছে।
- ভাষা শিক্ষা: ইংরেজি, কোরিয়ান, জার্মানসহ বিভিন্ন ভাষা শেখার জন্য ভিডিও সিরিজ এখন বড় সহায়তা হয়ে উঠেছে।
- প্রযুক্তি ও কোডিং: ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ডেটা সায়েন্স-এসব শেখা যাচ্ছে একদম বিনামূল্যে, শুধুমাত্র ইউটিউব দেখে।
- ভর্তি ও চাকরির প্রস্তুতি: বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, বিসিএস, ব্যাংক ও সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য সাজানো ও পরিকল্পিত গাইডলাইন ভিডিও তৈরি হচ্ছে-যা এক সময় শুধু কোচিং সেন্টারেই পাওয়া যেত।
কেন ইউটিউব এতো জনপ্রিয়?
- সময় ও স্থানের স্বাধীনতা: যখন খুশি, যেখানেই থাকুক-শিক্ষার্থী নিজের সময়মতো শিখতে পারছে।
- কম খরচে মানসম্পন্ন শিক্ষা: শহরের নামী কোচিং সেন্টারের ফিসের তুলনায় ইউটিউব সম্পূর্ণ ফ্রি। ফলে আর্থিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বড় সুযোগ।
- ভিজ্যুয়াল লার্নিং সুবিধা: গবেষণা বলছে, মানুষ সাধারণত দেখা ও শোনা-দুইয়ের সমন্বয়ে শেখে সবচেয়ে বেশি। ইউটিউব সেই সুবিধা নিশ্চিত করছে।
শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা বলছে...
অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মত অনুযায়ী, একটি কঠিন টপিক যখন একাধিক ভিডিওতে বিভিন্ন কণ্ঠে ও ভিন্ন ব্যাখ্যায় পাওয়া যায়, তখন বিষয়টি বুঝতে সহজ হয়। তাছাড়া, অনেক কনটেন্ট নির্মাতা একদম শূন্য থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে শেখায়, ফলে একজন শিক্ষার্থী ধাপে ধাপে দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
চ্যালেঞ্জও আছে
তবে এই ডিজিটাল শিক্ষায় কিছু সমস্যা আছে-
- তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা: সব কনটেন্ট নির্ভরযোগ্য না। যাচাই না করলে ভুল তথ্য গ্রহণের ঝুঁকি থাকে।
- মনোযোগ বিভ্রান্তি: ইউটিউবে একদিকে যেমন পড়াশোনা, তেমনি বিনোদনের অসংখ্য প্রলোভনও থাকে। ফলে শিক্ষার্থীরা মাঝে মাঝেই মূল লক্ষ্য হারিয়ে ফেলে।
- ইন্টারনেট নির্ভরতা: প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধার ঘাটতি থাকায় অনেকেই এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
ইউটিউব এখন আর কেবল ভিডিও শেয়ারিং সাইট নয়-এটি হয়ে উঠেছে একটি সর্বজনীন শ্রেণিকক্ষ। যেখানে দেশের, এমনকি বিশ্বের শিক্ষার্থীরা এক ছাদের নিচে, ডিজিটাল উপায়ে শিক্ষা গ্রহণ করছে। আধুনিক যুগের এই রূপান্তর শুধু পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা নয়, বরং জীবনঘনিষ্ঠ দক্ষতা অর্জনেও একটি চরম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভবিষ্যতের শিক্ষা যদি হয় প্রযুক্তিনির্ভর, তাহলে ইউটিউব আজ সেই ভবিষ্যতের দরজা খুলে দিচ্ছে-সবার জন্য, বিনামূল্যে, সীমাহীনভাবে।