ঘি-এর জাদু ত্বকের গভীরে পৌঁছে দেয় প্রকৃতির পুষ্টি ও সৌন্দর্য

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
একসময় ঘি ছিল কেবল পাতে, এখন তা জায়গা করে নিচ্ছে স্কিনকেয়ারের শীর্ষ তালিকায়। যুগ যুগ ধরে আমাদের উপমহাদেশে ঘি ব্যবহার হয়েছে রান্নায়, আয়ুর্বেদ চিকিৎসায়, এমনকি ধর্মীয় আচারেও। কিন্তু এখন এই উপাদানটির প্রতি বাড়ছে বৈজ্ঞানিক আগ্রহ, বিশেষ করে ত্বকের যত্নে এর উপযোগিতা নিয়ে।
ঘি-এর গঠনগত বৈশিষ্ট্য:
বিশুদ্ধ ঘি মূলত তৈরি হয় দুধের মাখন গলিয়ে এবং তার অম্লাংশ আলাদা করে। এতে থাকা উপাদানগুলো যেমন:
- ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড – যা ত্বকের কোষে পুষ্টি জোগায়।
- ভিটামিন A, D, E এবং K – ত্বক পুনর্গঠনে সহায়ক।
লিনোলিক অ্যাসিড – ত্বকে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে এবং অকালে বার্ধক্য রোধ করে।
এই উপাদানগুলো একত্রে কাজ করে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে, কোষ পুনর্গঠন করতে এবং প্রাকৃতিক সুরক্ষা গড়ে তুলতে।
- ত্বকের গভীরে পুষ্টি পৌঁছে দেয়
বেশিরভাগ কসমেটিক ক্রিম বা লোশন ত্বকের বাইরের স্তরে কাজ করে, কিন্তু ঘি ত্বকের গভীরে ঢুকে কোষের পুনর্জন্মে সহায়তা করে। বিশেষ করে রাতের ঘুমের সময় ঘি ব্যবহার করলে তা দীর্ঘক্ষণ কাজ করে, ত্বক হয় কোমল, প্রাণবন্ত এবং দীপ্তিময়।
শুষ্কতা ও চুলকানি দূরীকরণে ঘি: কার্যকর প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার
শীতের সময় অনেকের ত্বক ফেটে যায় বা চুলকায়। ঘি সেই পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক প্রলেপের মতো কাজ করে। এটা শুধু বাইরের ত্বককে আর্দ্র করে না, বরং ত্বকের প্রাকৃতিক লিপিড ব্যারিয়ার পুনরায় গঠন করে, যা পরিবেশগত ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
ব্রণ এবং সংবেদনশীল ত্বকের জন্যও উপযোগী?
অনেকের মনে প্রশ্ন আসে-ঘি কি অয়েলি বা ব্রণপ্রবণ ত্বকে ব্যবহার করা নিরাপদ? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ-যদি এটি পরিমাণমতো ও সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়। ঘির অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার রোধে সাহায্য করে এবং অণুজীবজনিত প্রদাহ কমায়।
রোদে পোড়া বা ক্ষত সারাতেও সহায়ক
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বকের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঘি তা নিরাময়ে সহায়তা করে। এটি ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে কোষে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যার ফলে দাগ দ্রুত হালকা হয় এবং স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।
ব্যবহারের কার্যকরী উপায়
- রাতে ঘুমানোর আগে মুখ ধুয়ে একফোঁটা ঘি আলতো ম্যাসাজ করে লাগান।
- সপ্তাহে ২ বার ঘি ও হলুদের মিশ্রণ ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে উজ্জ্বলতা বাড়ে।
- ঠোঁট ফাটলে একফোঁটা ঘি ঠোঁটে ব্যবহার করলে দ্রুত আরাম মেলে।
- অতিরিক্ত ফাটা গোড়ালি বা কনুইতে ঘি নিয়মিত লাগালে চামড়া দ্রুত মসৃণ হয়।
তেলতেলে বলেই যাকে একসময় দূরে রাখা হতো, সেই ঘিই আজ পরিণত হয়েছে এক কার্যকর স্কিন কেয়ার রত্নে। এটি শুধু প্রাকৃতিক উপাদান নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত এক পুষ্টিসমৃদ্ধ সুরক্ষাবলয়। বাজারের কৃত্রিম প্রসাধনীর চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী এই উপাদানটির ব্যবহার আমাদের ত্বকের পরিচর্যায় একটি সচেতন, বিজ্ঞানভিত্তিক পরিবর্তন আনতে পারে।