জীবনে কোনো যুদ্ধে হারেননি-তবু ইরানের কাছে হেরে গিয়েছিলেন আলেকজান্ডার!

- Author, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ইতিহাস যাকে 'অপরাজেয় বিজেতা' হিসেবে জানে, সেই আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট বাস্তবে পারস্যের (বর্তমান ইরান) মাটিতে এক অদৃশ্য যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন-এমনটাই মনে করেন ইরানি ঐতিহাসিকরা।
খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০ থেকে ৩২৮ সালের মধ্যে আলেকজান্ডার পারস্যজয়ের অভিযান চালান। সামরিক দিক দিয়ে তিনি সফল হলেও, ইরানি সংস্কৃতি, ধর্ম ও ঐতিহ্যের কাছে তার জয় অনেকাংশেই পরিপূর্ণ ছিল না।
পার্সেপোলিসে আগুন: আত্মার ওপর আঘাত
পারস্যের ঐতিহাসিক রাজধানী পার্সেপোলিস দাহ করেন আলেকজান্ডার। তিনি জ্বালিয়ে দেন প্রাচীন মন্দির, ধর্মগ্রন্থ এবং রাজকীয় স্থাপনা। পার্সিয়ান ঐতিহাসিক দলিল, যেমন Book of Arda Viraf এবং Bundahishn-এ তাকে 'অভিশপ্ত রোমান' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। একে শুধু শত্রুর উপর আঘাত নয়, বরং পারস্যের আত্মপরিচয়ের ওপর এক সাংস্কৃতিক আগ্রাসন হিসেবেই দেখা হয়।
ইরানিদের চোখে: বিজয়ী নয়, ধ্বংসকারী
পারস্যের বিখ্যাত সাহিত্য Shahnameh ও Iskandarnameh-এ আলেকজান্ডার প্রথমে বীর হিসেবে তুলে ধরা হলেও পরে তিনি পরিণত হন একজন ‘বিদেশি আক্রমণকারী’ বা 'ধর্ম ও ঐতিহ্য বিনাশকারী' হিসেবে। এসব সাহিত্যকর্মে তাকে আর কোনো বিজেতার চেয়ে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয়-একজন যিনি শরীর দিয়ে জয় করলেও মন ও আত্মা জয় করতে পারেননি।
সংস্কৃতির সঙ্গে মিলনের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়
ইতিহাসে দেখা যায়, আলেকজান্ডার পারস্যের শাসনব্যবস্থা, পোশাক, এমনকি বিয়ে প্রথা অবলম্বন করেছিলেন। পারস্যের নারীদের বিয়ে করেন, ইরানি প্রশাসকদের গুরুত্ব দেন। কিন্তু এই সমন্বয় চেষ্টা তার নিজস্ব সেনাবাহিনীর মধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। অনেকেই তাকে 'গ্রীক মূল্যবোধ' বিসর্জনদাতা হিসেবে দেখতে শুরু করেন।
অভ্যন্তরীণ অনুশোচনার চিহ্ন
বিজয়ের পর সাইরাস দ্য গ্রেটের সমাধি দেখে আলেকজান্ডার নাকি ক্ষুব্ধ ও অনুতপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি সমাধি সংস্কারের আদেশ দেন। এ থেকেই বোঝা যায়, পারস্যের ঐতিহ্যবাহী মহত্ত্ব তাকে মুগ্ধ করেছিল, এবং সম্ভবত নিজের আগ্রাসনের জন্য কোনো এক স্তরে অনুশোচনাও বোধ করেছিলেন।
শেষকথা
সামরিক মানদণ্ডে আলেকজান্ডার ছিলেন এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী জয়যোদ্ধা। কিন্তু ইতিহাস শুধু যুদ্ধের নয়, আত্মারও। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলা যায়-পারস্যের ধর্ম, সংস্কৃতি, ও আত্মপরিচয়ের কাছে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ছিলেন এক পরোক্ষ পরাজিত।
ইরানিদের স্মৃতিতে তিনি একজন বিজয়ী নয়, বরং এক ব্যথিত আক্রমণকারী-যিনি শরীর জয় করলেও আত্মা জয় করতে পারেননি।