অ্যাভেলেবিলিটি বায়াস আমাদের সিদ্ধান্তের অদৃশ্য সঙ্গী

অ্যাভেলেবিলিটি বায়াস আমাদের সিদ্ধান্তের অদৃশ্য সঙ্গী
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আধুনিক জীবনে তথ্যের প্রবাহ এতই দ্রুত এবং প্রচুর যে, আমরা সবকিছু যাচাই-বাছাই করে নেওয়ার সুযোগ পাই না। এ অবস্থায় আমাদের মস্তিষ্ক এমন একটি প্রবণতা প্রদর্শন করে, যাকে বলা হয় অ্যাভেলেবিলিটি বায়াস (Availability Bias) - অর্থাৎ, সহজলভ্য বা সাম্প্রতিক মনে পড়া তথ্যকে আমরা সত্যি এবং গুরুত্বপূর্ন মনে করি, যদিও সেই তথ্য সম্পূর্ণ বা সঠিক নাও হতে পারে।

অ্যাভেলেবিলিটি বায়াস আমাদের মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক সংরক্ষণ পদ্ধতির অংশ। তথ্য বিশ্লেষণের সময় মস্তিষ্ক 'শক্তি ও সময় বাঁচাতে' স্মরণীয় বা সাম্প্রতিক তথ্যকে অগ্রাধিকার দেয়। উদাহরণস্বরূপ, যখন আমরা কোনো দুর্ঘটনার খবর দেখি বা শুনি, সেটি আমাদের মস্তিষ্কে সহজেই ধারণ হয় এবং আমরা মনে করি সেই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে, যদিও প্রকৃতপক্ষে তা বিরল। এর কারণ হল, "যা সহজে মনে পড়ে, সেটাই বেশি ঘটে" - এই ভুল ধারণা।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, এই বায়াস মানুষের প্রায় সব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলে - স্বাস্থ্যঝুঁকি, বিনিয়োগ, রাজনৈতিক মতামত, এমনকি দৈনন্দিন সাধারণ বিশ্বাস পর্যন্ত। ২০১০ সালে মার্কিন সাইকোলজিস্ট আমোস টভারস্কি এবং ড্যানিয়েল কানম্যানের কাজ থেকে জানা যায়, অ্যাভেলেবিলিটি বায়াস মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ তথ্যকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার পেছনে মূল কারণ।

উদাহরণস্বরূপ, করোনা মহামারীর সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কিছু ঘটনার কারণে মানুষ মনে করতে পারে মহামারি আরও বিস্তৃত বা মারাত্মক, যদিও প্রকৃত পরিসংখ্যান তার চেয়ে ভিন্ন ছবি দেখায়।

আবার, বিমান দুর্ঘটনার খবর প্রচুর প্রচারিত হওয়ার কারণে মানুষ বিমান ভ্রমণকে অনিরাপদ ভাবলেও, আসলে পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিমান যাত্রা অনেক নিরাপদ

অ্যাভেলেবিলিটি বায়াস আমাদের গণমাধ্যম ব্যবহারের ধরনকেও প্রভাবিত করে। যেসব ঘটনা বা তথ্য বেশি দেখানো হয়, মানুষ সেগুলোকে সত্যের সমার্থক মনে করে ফেলে। এটি রাজনৈতিক মতামত ও সামাজিক বিবাদেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্য বা ফেক নিউজের জন্য এটি একটি সুযোগ তৈরি করে।
 

তবে এই বায়াস থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়ও আছে।

- প্রথমত, তথ্য যাচাই ও উৎসের বিশ্বাসযোগ্যতা পরীক্ষা করা।

- দ্বিতীয়ত, পরিসংখ্যান বা বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে তথ্যের পেছনের সত্যতা বোঝার চেষ্টা করা।

- তৃতীয়ত, বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তথ্য মূল্যায়ন করা, যাতে আমাদের চিন্তা সীমাবদ্ধ না থাকে।
 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজকের তথ্যভাণ্ডার থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে এই বায়াস সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যাবশ্যক। কারণ, শুধুমাত্র তথ্যের উপস্থিতি নয়, তার প্রভাবও আমাদের জীবন ও সমাজকে গভীরভাবে পরিবর্তন করে।

অ্যাভেলেবিলিটি বায়াস শুধুমাত্র একটি মনস্তাত্ত্বিক ত্রুটি নয়; এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে এবং ভুল তথ্যের কারণে বড় ধরনের সামাজিক বিভ্রান্তির জন্ম দিতে পারে। তাই তথ্য গ্রহণের সময় আমাদের মস্তিষ্ককে একটু ধৈর্য ধরতে শেখানোই হবে ভবিষ্যতের শক্তি।

অন্তত সেই বায়াস চিনে নিলে, আমরা তথ্যের জগতে কিছুটা হলেও নিজের পথ তৈরি করতে পারব।


সম্পর্কিত নিউজ