রান্নাঘরের ভুলেই ক্যানসার!! কোন অভ্যাসগুলো আপনার অজান্তেই বাড়িয়ে দিচ্ছে বিপদ??

রান্নাঘরের ভুলেই ক্যানসার!! কোন অভ্যাসগুলো আপনার অজান্তেই বাড়িয়ে দিচ্ছে বিপদ??
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

খাবার শুধু পেট ভরায় না, শরীরের সুস্থতার অন্যতম মূল চাবিকাঠিও বটে। কিন্তু আপনি জানেন কি, প্রতিদিন রান্না করতে গিয়ে আমরা এমন কিছু ভুল করে বসি-যা ক্যানসারের ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়? আমাদের নিত্যদিনের রান্নার অভ্যাসগুলোতে কিছু অসচেতনতা রয়েছে, যেগুলি সময়মতো সংশোধন না করলে শরীরে দীর্ঘমেয়াদে ভয়ানক প্রভাব ফেলতে পারে।

নিচে তুলে ধরা হলো এমন কয়েকটি সাধারণ অথচ ঝুঁকিপূর্ণ রান্নার ভুল, যেগুলি থেকে সচেতন হওয়া এখন সময়ের দাবি-
 

১. পুড়ে যাওয়া খাবার খাওয়া বা পুড়িয়ে রান্না করা

খুব বেশি তাপে মাছ-মাংস বা সবজি ভাজলে বা পুড়িয়ে ফেললে তাতে তৈরি হয় অ্যাক্রিলামাইড, হেটারোসাইক্লিক অ্যামাইন (HCA) এবং পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (PAH)—যেগুলি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পরিচিত কার্সিনোজেন (ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান) হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশেষ করে গ্রিল করা, বারবিকিউ, বা খোসাসহ পুড়িয়ে খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সতর্ক হওয়া জরুরি।
 

২. বারবার ব্যবহার করা তেল

একবার ব্যবহৃত তেল বারবার গরম করলে তাতে অক্সিডেটিভ ডিগ্রাডেশন ঘটে, যার ফলে তৈরি হয় ফ্রি র‍্যাডিক্যালস এবং টক্সিক কম্পাউন্ড। এগুলো লিভার, ফুসফুস ও অন্ত্রের কোষে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষ করে দোকানদাররা একাধিকবার তেল গরম করে যেসব তেলে পুরি, সিঙ্গারা বা ফাস্টফুড তৈরি করে, সেগুলোর স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
 

৩. অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে টক জাতীয় রান্না

টমেটো, লেবু, বা ইমলি জাতীয় টক উপাদানগুলো যখন অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে রান্না করা হয়, তখন তাতে তৈরি হতে পারে অ্যালুমিনিয়াম লিচ, যা শরীরে দীর্ঘসময় ধরে জমে গিয়ে স্নায়ু তন্ত্র, কিডনি এবং পরবর্তীতে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
 

৪. প্রিজারভেটিভযুক্ত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার দিয়ে রান্না

সসেজ, প্রক্রিয়াজাত মাংস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস ইত্যাদি খাদ্যে থাকে নাইট্রাইটস ও নাইট্রেটস, যা পাকস্থলীতে গিয়ে নাইট্রোসামাইন নামে একটি উপাদানে রূপান্তরিত হয়—যা শক্তিশালী কার্সিনোজেন।
 

৫. অপরিষ্কার বা ভেজা পাত্রে রান্না শুরু

ভেজা বা আধা-পরিষ্কার পাত্রে রান্না করলে সহজেই জন্মাতে পারে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস, যারা খাবারে মাইকোটক্সিন সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এরা পাকস্থলী, যকৃত ও অন্ত্রে ক্যানসার সৃষ্টির ঝুঁকি বহন করে।
 

৬. অতিরিক্ত লবণ ও চিনি ব্যবহার

বেশি লবণ শুধু রক্তচাপ বাড়ায় না, বরং পাকস্থলীর ক্যানসারের সাথেও এর সম্পর্ক রয়েছে। অপরদিকে চিনি বেশি খেলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও স্থূলতা তৈরি হয়, যা স্তন, অগ্ন্যাশয় ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
 

৭. প্লাস্টিকের পাত্রে গরম খাবার রাখা বা মাইক্রোওয়েভে গরম করা

বেশিরভাগ প্লাস্টিকে থাকে বিসফেনল-এ (BPA) বা ফথ্যালেটস, যেগুলো উচ্চ তাপে খাবারে মিশে গিয়ে হরমোনাল ডিসরাপশন ঘটায় এবং দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন হরমোন-নির্ভর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, যেমন—স্তন ক্যানসার বা প্রোস্টেট ক্যানসার।
 

✔✔ কী করবেন??

☞ খাবার ভাজার সময় মাঝারি তাপমাত্রা ব্যবহার করুন এবং পোড়া অংশ কেটে বাদ দিন।

☞একবার ব্যবহৃত তেল দ্বিতীয়বার ব্যবহার না করাই উত্তম।

☞ অ্যালুমিনিয়ামের পরিবর্তে স্টেইনলেস স্টিল বা কাঁচের পাত্র ব্যবহার করুন।

☞ প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবারের পরিমাণ কমান এবং ঘরের তৈরি খাবারে মনোযোগ দিন।

☞ রান্নার আগে পাত্র সম্পূর্ণ শুকনো ও পরিষ্কার কিনা নিশ্চিত করুন।

☞ খাবারে লবণ ও চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

গরম খাবার সবসময় কাচ বা সিরামিক পাত্রে রাখুন।রান্না শুধুই স্বাদের খেলা নয়—এটি একটি বিজ্ঞান। সামান্য অসতর্কতা বড় বিপদের কারণ হতে পারে। আজই নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে রান্নার অভ্যাসে আনার সময় এসেছে বিজ্ঞানসম্মত সচেতনতা।


সম্পর্কিত নিউজ