শুধু সমাধান নয়, শোনা আর বোঝার মধ্যেই লুকানো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার রহস্য

শুধু সমাধান নয়, শোনা আর বোঝার মধ্যেই লুকানো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার রহস্য
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

একসঙ্গে বসে কথা বলছে দু'জন-নারী বলছে অনুভূতির কথা, আর পুরুষ খুঁজছে সমাধান। কথোপকথনের শেষে কেউ হয়তো বিরক্ত, কেউ আবার ভগ্নমনোরথ। এমনটা কি বারবার ঘটছে? মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ নারী ও পুরুষের ভিন্ন যোগাযোগ পদ্ধতি ও মানসিক চাপ মোকাবেলার ধরণ।

নারী চায় বোঝাপড়া, পুরুষ খোঁজে সমাধান

অনেক পুরুষ এখনো বুঝে উঠতে পারেন না—নারীরা যখন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলেন, সেটি সবসময় অভিযোগ নয়। নারীর মনে কোনো কষ্ট বা চাপ থাকলে, সেটি প্রকাশ করে ফেলার মাধ্যমেই সে হালকা বোধ করেন। এটি এক ধরনের আত্ম-উপশম প্রক্রিয়া—যেখানে "শোনা"টাই বড়ো।

অন্যদিকে, পুরুষদের মধ্যে একটি জৈবিক ও সামাজিক প্রবণতা দেখা যায়—সমস্যা শুনলেই সেটির দ্রুত সমাধান খোঁজা। বিষয়টি যত দ্রুত 'মেরামত' করা যায়, তত ভালো—এমন মানসিকতা অনেক পুরুষের মধ্যে দৃঢ়ভাবে গেঁথে আছে। এই ফিক্সিং অ্যাপ্রোচ তখনই ভুল বোঝাবুঝির জন্ম দেয়, যখন নারী শুধু চায়, কেউ তার কথা মন দিয়ে শুনুক—সমাধান না হোক, সমব্যথী কেউ থাকুক পাশে।
 

মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা কী বলছে?

সাম্প্রতিক বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণায় উঠে এসেছে, নারী ও পুরুষের ব্রেইন স্ট্রাকচার ও হরমোনাল রেসপন্সে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যা তাদের অনুভূতি প্রকাশ ও পরিচালনায় প্রভাব ফেলে। নারীরা অক্সিটোসিন নামক 'বন্ডিং হরমোন'-এর প্রভাবে সম্পর্কমুখী আচরণে অভ্যস্ত হন বেশি। এর ফলে তারা কথোপকথনের মাধ্যমে আবেগ ভাগাভাগিকে মানসিক শান্তির একটি পথ হিসেবে দেখেন।

অন্যদিকে, পুরুষদের ক্ষেত্রে কর্টিসল তথা স্ট্রেস হরমোনের কার্যকরী চাপ মোকাবেলায় 'অ্যাকশন নেওয়া' একটি স্বাভাবিক প্রবণতা। ফলে কোনো আবেগ প্রকাশ দেখলেই তা সমাধানের জন্য তৎপর হয়ে ওঠে পুরুষ মস্তিষ্ক।
 

কী করলে সম্পর্ক বাঁচে?

সমাধান সবসময় কথার প্রয়োজনীয় উত্তর নয়। বরং প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা, মনোযোগ দিয়ে শোনা, মাঝে মাঝে শুধু একটি বাক্য—"আমি বুঝতে পারছি, এটা সত্যিই কঠিন"—এই ছোট্ট সহানুভূতিটুকু বড় ফারাক গড়ে দিতে পারে।

একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে ওঠে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে, যেখানে একজন নিজেকে প্রকাশ করতে পারে, আর অন্যজন তাকে উপলব্ধি করে। এই বোঝাপড়া তৈরি করতে পারলে অনেক মানসিক দ্বন্দ্ব, অকারণ ঝগড়া এমনকি দীর্ঘস্থায়ী দূরত্বও এড়ানো যায়।
 

দিকনির্দেশনা দেওয়া হোক স্পষ্টভাবে

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কথোপকথনের শুরুতেই যদি নারী জানিয়ে দেন—"আমি তোমার সঙ্গে একটু অনুভূতি ভাগাভাগি করতে চাই, কোনো সমাধান দরকার নেই"—তাহলে পুরুষ সঙ্গী নিজেকে সেই মোডে আনতে পারেন, যা সম্পর্ককে সহজ ও সুন্দর রাখতে সহায়তা করে। একইভাবে, পুরুষদেরও উচিত নিজের শ্রবণ ক্ষমতা বাড়ানো, মনোযোগ দিয়ে না শুনলে সম্পর্কের গভীরতা তৈরি হয় না।
 

সম্পর্ক মানেই বোঝাপড়া, বিতর্ক নয়

প্রতিটি মানুষ চায়—দিনশেষে এমন একজন থাকুক, যার কাছে কথা বলা যায়, যা কিছু জমে থাকে মনে, তা শেয়ার করা যায়। এই চাওয়াটা মানসিক শান্তির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। একজন শোনে, আরেকজন বোঝে—এমন বন্ধনই একে অপরকে আরো কাছাকাছি আনে।

এক কথায়, সম্পর্কের যত্ন নিতে হলে প্রথম শিখতে হবে—শোনা, শুধু কান দিয়ে নয় ; বরং হৃদয় দিয়ে।


সম্পর্কিত নিউজ