কুরবানির নিয়ত ও দোয়া: কিভাবে করতে হয়

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ইসলামি শরিয়তের আলোকে কুরবানির পূর্বের নিয়ম ও পদ্ধতি কুরবানি একটি ইবাদত এবং এর প্রতিটি পদক্ষেপই আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা উচিত। এই ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো সঠিক নিয়ত ও শরিয়তসম্মতভাবে পশু জবাই করা। কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী নিয়ত এবং জবাইয়ের সময় দোয়া পাঠ করাও কুরবানির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
কুরবানির পূর্বে নিয়ত
ইবাদতের মতো কুরবানির ক্ষেত্রেও নিয়ত (মনের ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা আবশ্যক নয়, বরং অন্তরে দৃঢ়ভাবে সংকল্প করাই যথেষ্ট। যেমন:
নিয়ত: "আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি করছি" — এই মনোভাবই হচ্ছে নিয়ত।
'উমার ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
"প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে।" — [সহীহ মুসলিম - 1907]
কুরবানির সময় পাঠযোগ্য দোয়া-
পশু জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম নেওয়া ('বিসমিল্লাহ' বলা) ওয়াজেব।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ''যদি তোমরা তাঁর নিদর্শনসমূহের বিশ্বাসী হও তবে যাতে (যে পশুর যবেহ করার সময়) আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে তা আহার কর।'' (কুঃ ৬/১১৮) ''এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তা হতে তোমরা আহার করো না; উহা অবশ্যই পাপ।'' (কুঃ ৬/১২১)
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ''যা খুন বহায় এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তা ভক্ষণ কর।''(বুখারী ২৩৫৬, মুসলিম ১৯৬৮নং)
'বিসমিল্লাহ'র সাথে 'আল্লাহু আকবার' যুক্ত করা মুস্তাহাব। অবশ্য এর সঙ্গে কবুল করার দুআ ছাড়া অন্য কিছু অতিরিক্ত করা বিধেয় নয়।
অতএব (কুরবানী কেবল নিজের তরফ থেকে হলে) বলবে, ----'বিসমিল্লাহি অল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিন্কা অলাক, আল্লাহুম্মা তাক্বাববাল মিন্নী।'
নিজের এবং পরিবারের তরফ থেকে হলে বলবে,'---- তাক্বাববাল মিন্নী অমিন আহলে বাইতী।' অপরের নামে হলে বলবে, '---তাক্বাববাল মিন (এখানে যার তরফ থেকে কুরবানী তার নাম নেবে)(মানাসিকুল হাজ্জ, আলবানী ৩৬পৃঃ)
এই সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পাঠ করা বিধেয় নয়; বরং তা বিদআত।(আল-মুমতে ৭/৪৯২) যেমন 'বিসমিল্লাহ'র সাথে 'আর-রাহমানির রাহীম' যোগ করাও সুন্নত নয়।
যেহেতু এ সম্বন্ধে কোন দলীল নেই। যেমন যবেহ করার লম্বা দুআ 'ইন্নী অজ্জাহ্তু' এর হাদীস যয়ীফ। (যয়ীফ আবূ দাঊদ ৫৯৭নং)
যবেহর ঠিক অব্যবহিত পূর্বে 'বিসমিল্লাহ' পাঠ জরুরী।
কুরবানি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতসমূহ:
১. কুরবানির পশুকে ভালোভাবে খাওয়ানো ও যত্ন নেওয়া।
২. পশু জবাইয়ের সময় ছুরি ধারালো রাখা যেন পশুকে কষ্ট না হয়।
৩. পশুকে কিবলামুখী করে রাখা।
৪.পশু জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম নেওয়া ('বিসমিল্লাহ' বলা) ওয়াজেব।
৫। জবাইয়ের সময় তাড়াহুড়া না করে ধীরে ও সতর্কভাবে কাজ করতে হবে।
কুরবানি শুধু একটি ধর্মীয় রীতি নয়, বরং এটি একজন মুসলমানের জন্য একটি গভীর আত্মত্যাগের ইবাদত। সঠিক নিয়ত, যথাযথ দোয়া ও ইসলামি পদ্ধতিতে কুরবানি করলে তবেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত কুরবানির আগে এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ও যথাযথভাবে পালন করা।