কন্যা নয় কেবল আদরের, বাবার নিউরো-বন্ডিংয়ের কেন্দ্রে রয়েছেন মেয়েরা - বলছে বিজ্ঞান

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
"বাবার চোখের মণি" - এই বাক্যটি শুধু আবেগে গাঁথা কোনো রূপক নয়। আজকের বিজ্ঞান বলছে, মেয়ের প্রতি বাবার টান আসলে এক জটিল নিউরোবায়োলজিক্যাল ও মানসিক প্রক্রিয়ার ফলাফল। এটা কেবল ভালোবাসা নয় - বাবাদের ব্রেইন, হরমোন এবং মনস্তত্ত্ব একযোগে কাজ করে মেয়েদের প্রতি এক অনন্য অনুভূতি তৈরি করতে।
ব্রেইনের প্রতিক্রিয়া: কন্যার মুখে হাসি মানেই বাবার নিউরাল আলোড়ন
নিউরোসায়েন্সের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাবারা তাদের কন্যাসন্তানের মুখাবয়ব, বিশেষত হাসি বা কান্নার প্রতিক্রিয়ায়, ছেলেসন্তানের তুলনায় বেশি নিউরাল এক্টিভেশন দেখান।
স্নায়বিকভাবে, মস্তিষ্কের Amygdala, যা আবেগ বুঝে ও নিয়ন্ত্রণ করে, এবং Prefrontal Cortex, যা আচরণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে - এই দুই অঞ্চলে কন্যার প্রতি বাবাদের বেশি সাড়া দেখা যায়। এর অর্থ, মেয়ের আবেগ-ভঙ্গিমা বাবার মস্তিষ্কে একপ্রকার তীব্র, প্রাকৃতিক রেসপন্স তৈরি করে, যা ছেলের ক্ষেত্রেও হয়, তবে অনুপাতে কম।
Oxytocin: ভালোবাসার হরমোনে মেয়েই বাবার সংবেদনশীলতার মূল কারণ
মেয়েসন্তান জন্ম নেয়ার সময় বাবার শরীরে Oxytocin নামক হরমোনের নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এই হরমোন মানব মস্তিষ্কে 'bonding' বা সংযুক্তির অনুভূতি বাড়ায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, কন্যাসন্তান জন্মালে এই নিঃসরণ মাত্রা ছেলেসন্তানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়।
এর ফলে বাবা হয়ে ওঠেন আরও সংবেদনশীল, আবেগপ্রবণ এবং প্রটেক্টিভ। অনেক বাবা নিজের অজান্তেই মেয়ের কষ্টে ভেঙে পড়েন, মেয়ের হাসিতে প্রশান্তি পান — এর সবটাই হরমোনজনিত, বৈজ্ঞানিক সত্য।
মানসিক ও সামাজিক গঠনে মেয়ের প্রতি বেশি যত্নের প্রবণতা
আন্তর্জাতিক মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা যায়, বাবারা মেয়েকে 'ভঙ্গুর' বা 'সুরক্ষার দাবিদার' হিসেবে দেখার প্রবণতা বেশি। এই মনোভাব জন্ম নেয় মূলত বিকাশমান মানসিক গঠনের সময়ে।
বাবাদের মনে একধরনের "protective schema" তৈরি হয়, যেখানে কন্যার ভবিষ্যৎ—নিরাপত্তা, শিক্ষাগত সাফল্য ও সমাজে প্রতিষ্ঠা—নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের গভীর, দায়িত্বশীল চিন্তা কাজ করে। এই দায়িত্ববোধই বাবাকে আরও যত্নশীল ও যুক্ত রাখে মেয়ের প্রতি।
সংস্কৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গি: মেয়েরা কেবল সন্তান নয়, সম্মান ও দায়িত্বের প্রতীক
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার সমাজ কাঠামোতে মেয়েকে শুধু আদরের নয়, বরং ভবিষ্যতের একটি দায়িত্ব ও সম্মানের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। এই সাংস্কৃতিক বিশ্বাস বাবাকে করে তোলে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে অধিক মনোযোগী।
মেয়ের জন্য 'ভবিষ্যৎ গড়ার' চেষ্টায় বাবারা আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেন — স্কুল বাছাই, শিষ্টাচার শেখানো, এমনকি মানসিক সুস্থতা নিয়েও। বাবার এই ভূমিকাকে অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন "invisible architect" — যিনি মেয়ের চরিত্র গঠনে নিরব নির্মাতা।
সামগ্রিকভাবে , বাবা-মেয়ের সম্পর্ক শুধুই একতরফা আবেগ নয়; এটি বৈজ্ঞানিকভাবে পরিপুষ্ট এক নিখুঁত জৈব ও মানসিক সমন্বয়। নিউরোসায়েন্স বলছে, এই টান মানুষের মস্তিষ্কের প্রকৃতি, হরমোনের প্রভাব ও সামাজিক মানসিকতার একত্র প্রতিফলন।
তাই কেউ যখন বলে — "মেয়েরা বাবার চোখের মণি", তখন বুঝতে হবে, এ কথা কেবল কাব্যিক নয়, বরং মানব-সত্তার গভীর নিউরোসাইকোলজিক সত্য।