যাকাত বনাম কুরবানি: ধর্মীয় দায়িত্বের পার্থক্য

যাকাত বনাম কুরবানি: ধর্মীয় দায়িত্বের পার্থক্য
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ইসলামে যাকাত ও কুরবানি—দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, কিন্তু এগুলোর উদ্দেশ্য, ফরজ হওয়ার শর্ত, সময় ও বাস্তব প্রয়োগে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য। অনেকেই এই দুটি ইবাদত নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন—কোনটি ফরজ? কোনটি ওয়াজিব? কখন এবং কার ওপর পালন করা জরুরি?

কেউ মনে করেন কুরবানি ফরজ, কেউ আবার যাকাত এড়িয়ে যান কেবল দান মনে করে। অথচ শরিয়ত বলছে—এ দুটি ইবাদতের রয়েছে পৃথক বৈধতা, উদ্দেশ্য ও পালনের সময়সীমা। 
 

যাকাত: আর্থিক শুদ্ধির ফরজ ইবাদত 

যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। যাদের কাছে হিজরি বর্ষ গণনায় এক বছর ধরে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে (স্বর্ণ, রূপা বা নগদ অর্থ) তাদের জন্য যাকাত দেওয়া ফরজ।  কুরআনে বহু স্থানে নামাজের সাথে যাকাত আদায়ের নির্দেশ এসেছে:

কুরআন বলছে: "তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং যাকাত দাও।" (সূরা বাকারা: ৪৩)
 

শর্তসমূহ:

নিসাব পরিমাণ সম্পদ কারো কাছে এক বছর থাকলে যাকাত ফরজ হয়।

যাকাতের হার: স্বর্ণ-রুপা বা নগদের ওপর ২.৫%।

প্রাপ্য শ্রেণি: গরিব, মিসকিন, ঋণগ্রস্ত, মুফলিস ইত্যাদি আট শ্রেণিকে যাকাত দেওয়া যায়। (সূরা তাওবা: ৬০)
 

কুরবানি: ইবরাহিমি ত্যাগের স্মারক

কুরবানি ঈদুল আজহার সময় কেবল তিন দিনের জন্য (১০-১২ জিলহজ) পালনীয় ইবাদত। এটি ফরজ নয়, তবে হানাফি মাযহাবে এটি ওয়াজিব

নবী করিম (সা.) বলেন:

"যার সামর্থ্য আছে কিন্তু কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।" (আহমদ, ইবনু মাজাহ: ৩৫১৬ )
 

কার জন্য ওয়াজিব?

যে ব্যক্তি কুরবানির দিনগুলিতে নিসাব পরিমাণ মালিক (৬১২.৩৬ গ্রাম রূপার সমমূল্য) থাকে—তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব।



তফাৎ এক নজরে

১. বিধানের ধরন

যাকাত: ফরজ (আল্লাহর পক্ষ থেকে অবশ্য পালনীয় ইবাদত)

কুরবানি: হানাফি মতে ওয়াজিব, অন্য মাজহাবে সুন্নাতে মুআক্কাদা

২. পালনের সময়

যাকাত: হিজরি বর্ষপূর্তিতে, যেদিন সম্পদ নিসাবের পরিমাণে পৌঁছায়

কুরবানি: জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত (ঈদুল আজহার সময়)

৩. উদ্দেশ্য

যাকাত: ধনসম্পদ পবিত্রকরণ, গরিবদের সহায়তা

কুরবানি: আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, তাকওয়া অর্জন ও আত্মত্যাগের অনুশীলন

৪. সম্পদের হিসাব

যাকাত: সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ (২.৫%)

কুরবানি: নির্দিষ্ট পশু কোরবানি করতে হয় (ভেড়া, ছাগল, গরু, উট ইত্যাদি)

৫. প্রাপ্য ব্যক্তি

যাকাত: নির্ধারিত ৮ শ্রেণির গরিব-মিসকিন, ঋণগ্রস্ত, মুসাফির ইত্যাদি

কুরবানি: গোশত আত্মীয়, প্রতিবেশী, গরিব ও নিজের পরিবারকে খাওয়ানো যায়

৬. প্রতীকী তাৎপর্য

যাকাত: ধনসম্পদের সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা

কুরবানি: হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগের স্মৃতি অনুসরণ

৭. বার্ষিকতা

যাকাত: প্রতি হিজরি বছর

কুরবানি: বছরে একবার (ঈদুল আজহা উপলক্ষে)
 

যাকাত ও কুরবানি—উভয়ই ইসলামী সমাজে মানবিকতা, আত্মশুদ্ধি ও ত্যাগের শিক্ষা প্রদান করে। যাকাতের মাধ্যমে বছরের পর বছর গরিব-দুঃস্থরা আর্থিক সহায়তা পায়, আর কুরবানি সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।

দুই ইবাদতের ভিন্নতা থাকলেও একটি অন্যটির বিকল্প নয়। প্রতিটি  মুসলমানের উচিত— আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সময় ও সামর্থ্য অনুযায়ী উভয় ইবাদত যথাযথভাবে পালন করা ।


সম্পর্কিত নিউজ