দিল্লি থেকে ছয় মাসে ৭৭০ "কথিত বাংলাদেশি" ফেরত: পাহেলগাম হামলার পর অভিযান জোরদার

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
গত ২২শে এপ্রিল পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত সরকার কথিত অবৈধ বাংলাদেশি ও ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ বিদেশিদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান তীব্র করেছে। অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর অনুযায়ী, গত ছয় মাসে দিল্লি থেকেই প্রায় ৭৭০ জন "অবৈধ অভিবাসী"কে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
পাহেলগাম হামলার মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দিল্লি পুলিশ একটি সমন্বিত অভিযান চালিয়ে ৪৭০ জন কথিত অবৈধ বাংলাদেশি এবং ৫০ জন অনুমোদিত সময়সীমার পরও অবস্থানরত বিদেশিকে চিহ্নিত করে। এদের সবাইকে গাজিয়াবাদের হিন্ডন এয়ারবেস থেকে বিশেষ বিমানে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে স্থলপথে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
দিল্লি পুলিশের এক কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, গত বছরের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অভিবাসীদের শনাক্ত ও আটক করার জন্য একটি যাচাইকরণ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিল। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ২০শে এপ্রিল পর্যন্ত দিল্লি পুলিশ প্রায় ২২০ জন অবৈধ অভিবাসী এবং ৩০ জন ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ বিদেশিকে আটক করে। এদের ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের মাধ্যমে রেল ও সড়কপথে পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে পাঠিয়ে, পরবর্তীতে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
তবে, ২২শে এপ্রিলের পাহেলগাম হামলার পর এই অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত এক মাসে হিন্ডন এয়ারবেস থেকে ৩-৪টি বিশেষ ফ্লাইটে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আগরতলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার দাবি অনুযায়ী, গত ছয় মাসে মোট ৭০০ জনেরও বেশি অবৈধ অভিবাসীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে দিল্লির ১৫টি জেলার ডেপুটি কমিশনারদের অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা শনাক্তে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর একটি ট্রেনে করে এই অভিবাসীদের পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে বাসে করে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
সূত্র আরও জানায়, দিল্লিতে বিজেপি সরকার গঠনের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পুলিশকে একটি "বৃহত্তর ষড়যন্ত্র ভাঙতে" নির্দেশ দেন। "অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের ভারতে প্রবেশ এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরির কাজে সহায়তাকারী চক্রগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তের মাত্রা বাড়াতে এবং কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে" বলে জানা গেছে। রাজ্য সরকারগুলোকে সন্দেহভাজন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অভিবাসীদের পরিচয় যাচাই করার জন্য ৩০ দিনের সময় দেওয়া হয় এবং নির্ধারিত সময়ে কাগজপত্র যাচাই না হলে, তাদের ফেরত পাঠানোর নির্দেশ ছিল। এখন নতুন নির্দেশে পরিচয়পত্র ইস্যুর ক্ষেত্রে থাকা দুর্বলতা দূর করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
জাল কাগজপত্র, ঠিকানা প্রমাণ, চাকরি ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিল্লিতে অবৈধ অভিবাসীদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া চক্রগুলোর খোঁজে জেলা পুলিশ, অপরাধ শাখা এবং স্পেশাল সেল একাধিক এফআইআর দায়ের করেছে। পাহেলগাম হামলার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লি পুলিশকে সব অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত শনাক্ত ও ফেরত পাঠাতে বলেছে।