এই বিশেষ দিনটিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল করার প্রতি কোরআন-হাদীস থেকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যা একজন মুসলমানের পারলৌকিক মুক্তি ও ইহকালীন বরকতের মাধ্যম হতে পারে।

শুক্রবারের গুরুত্বপূর্ণ চারটি আমল:

১. সূরা আল-কাহফ পাঠ করা: ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়বে তার জন্য তার পায়ের নীচ থেকে আসমানের মেঘমালা পর্যন্ত একটি আলো বিচ্ছুরিত হবে এবং দুই জুমার মধ্যবর্তী তার যা (গুনাহ) আছে সেটা থেকে তাকে মাফ করে দেয়া হবে।
 

২. অধিক পরিমাণে দরুদ শরীফ পাঠ করা: এই দিনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর সালাম ও দরুদ পাঠের অগাধ ফজিলত রয়েছে। দরুদ শরীফ: اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ ["আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম 'আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ"]
 

৩. বেশি বেশি ইস্তিগফার করা: পাপমুক্ত জীবনের পথে অগ্রসর হতে ইস্তিগফার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। ইস্তিগফার: أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ ["আস্তাগফিরুল্লাহ"] বিশেষ করে এই দিনে ইস্তিগফারের মাধ্যমে ব্যক্তি তার গুনাহ মাফের আবেদন জানাতে পারে।
 

৪. আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া করা: এই সময়কে হাদীসে 'দোয়া কবুলের সম্ভাব্য সময়' হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার দোয়া এই সময়ে কবুল করে থাকেন—যদি তা হয় আন্তরিকভাবে, হালাল উপার্জনে ও ঈমান সহকারে করা।
আবু হুরায়রা রা. বলেন-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন জুমার দিনের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন বলেছেন, এইদিন একটা সময় আছে, কোনো মুসলিম যদি ঐ সময়ে নামায আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায় আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দান করবেন।

(আবু হুরায়রা রা. বলেন,) এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত দিয়ে ইশারা করেছেন যে, ঐ মুহূর্তটা অতি অল্প সময়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৩

মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় স্পষ্ট এসেছে-

"সে মুহূর্তটি খুব সামান্য সময়।" -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫২
 

বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য দোয়ার আহ্বান

এই দিনটিকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে দোয়া করার আহ্বান জানিয়েছেন আলেমগণ। বিশেষত: ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, সুদান, কাশ্মীর, চীনের উইঘুর অঞ্চলসহ বিশ্বের বহু প্রান্তে নির্যাতিত, কষ্টে থাকা মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য দোয়া করা আমাদের কর্তব্য। দোয়া করুন যেন আল্লাহ তাআলা তাদের ধৈর্য, হিফাজত ও বিজয় দান করেন এবং দালাল, জালিম, মুনাফিক ও তাগুতি শক্তিগুলোকে ধ্বংস করে দেন, যদি তাদের হেদায়েত লেখা না থাকে।
 

জুমার দিন কেবল একটি সাপ্তাহিক রুটিন নয়—এটি আত্মশুদ্ধি, ইবাদত এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য দায়িত্বশীল হয়ে ওঠার একটি সুবর্ণ সুযোগ। যারা বাস্তবে নিয়মিত এসব আমল পালন করেন, ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের পারলৌকিক মুক্তির পথে চলার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুমার দিনের আমল যথাযথভাবে করার তাওফিক দান করুন, আমিন।

সূত্র: সহীহ হাদীস, তাফসীর গ্রন্থাবলি, আলেমদের বয়ান, ইসলামী স্কলারদের গবেষণা।