চেনাব নদীর পানিপ্রবাহ ইস্যুতে ভারতকে পাকিস্তানের কড়া হুঁশিয়ারি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
চেনাব নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহে ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে ভারতের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের অভিযোগ, ভারত ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি লঙ্ঘন করে নদীর জলধারা নিয়ন্ত্রণ করছে। এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি, তাদের নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহে কোনওরকম বাধা সৃষ্টি করা হলে, সেটিকে তারা 'যুদ্ধ ঘোষণার মতো' গুরুতর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করবে।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সেচমন্ত্রী কাজিম পিরজাদা এই প্রসঙ্গে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, চেনাব নদীর পানিপ্রবাহে এমন এক অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা গেছে, যা একেবারেই প্রাকৃতিক নয়। তার দাবি, এটি একটি সুপরিকল্পিত উদ্যোগ, যার মাধ্যমে পাকিস্তানের কৃষি ও জনজীবনে গুরুতর প্রভাব ফেলা হচ্ছে।
চেনাব নদীর উৎপত্তি ভারতের হিমাচল প্রদেশে হলেও সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী এর পানি পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ। তবে ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনার পর ভারত কার্যত এই চুক্তি থেকে সরে এসেছে বলে অভিযোগ ইসলামাবাদের।
ভারতের সীমান্তসংলগ্ন পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চল মূলত কৃষিনির্ভর। পানির প্রবাহে হঠাৎ এই রকম পরিবর্তন সেখানে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলেও সতর্ক করেন পিরজাদা। তিনি বলেন, ''যেসব অঞ্চলে বিকল্প পানির উৎস নেই, সেখানে এই প্রভাব মারাত্মক হবে।''
এদিকে ইসলামাবাদভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিন্নাহ ইনস্টিটিউটের মতে, ২৬ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে যাতে পাকিস্তান তা কাজে লাগাতে না পারে।
ভারতের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে জানিয়েছেন, পাকিস্তানি পাঞ্জাবের উজানে অবস্থিত বাগলিহার বাঁধের স্লুইস স্পিলওয়ে গেট নামিয়ে রাখা হয়েছিল 'স্বল্পমেয়াদি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ' হিসেবে।
যদিও সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী ভারতকে কিছু প্রকল্প নির্মাণের অধিকার দেওয়া হয়েছে, তবুও জলপ্রবাহের দিক পরিবর্তন বা তা আটকে রাখার ক্ষেত্রে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এ ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি আসেনি। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের সাবেক প্রধান কুশবিন্দর ভোরা দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া-কে বলেন, "চুক্তি যেহেতু স্থগিত, আমরা এখন বাধ্যবাধকতা ছাড়াই যেকোনো প্রকল্পে ফ্লাশিং করতে পারি।"
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে ভারত হয়তো পুরোপুরি পানিপ্রবাহ বন্ধ রাখতে পারবে না, তবে তারা যদি পানির প্রবাহের সময়সূচি নিয়ন্ত্রণ করে, তবে সেটাই যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে।
জিন্নাহ ইনস্টিটিউট এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে জানায়, ''পানি কখন ছাড়া হবে বা কতক্ষণ তা প্রবাহিত থাকবে— এই সূচির সামান্য পরিবর্তনেও কৃষিকাজে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং ফসলের উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যেতে পারে।''
এই জটিল পানি সংকট ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হলো।