ট্রাম্প বিদেশি চলচ্চিত্রে ১০০% শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার রাতে তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছেন যে, বিদেশি নির্মিত চলচ্চিত্রের ওপর ১০০% শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করতে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ট্রাম্প তাঁর পোস্টে লেখেন, "আমেরিকার সিনেমা শিল্প দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অন্য দেশগুলো নানা প্রণোদনার মাধ্যমে আমাদের নির্মাতাদের নিজেদের দেশে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তাই, আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে নির্দেশ দিচ্ছি, বিদেশি নির্মিত সিনেমার ওপর ১০০% শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করতে। আমরা চাই, সিনেমা আবার আমেরিকায় তৈরি হোক!"
তবে, শুল্ক আরোপের বিষয়টি কিছুটা অস্বচ্ছ। চলচ্চিত্র একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ (IP), পণ্য নয়, তাই সাধারণত এটি শুল্কের আওতায় পড়ে না। তবে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় জানিয়েছে, কিছু পরিষেবা নির্দিষ্ট ধরনের অশুল্ক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে পারে, যেমন—নিয়ম-কানুন বা কর প্রণোদনা, যা আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রতিযোগিতায় অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন শহর, বিশেষ করে টরন্টো এবং ডাবলিন, হলিউড নির্মাতাদের নিজেদের দেশে আনার জন্য করছাড়সহ নানা সুবিধা দিয়ে থাকছে। ফলে, অনেক সিনেমা এখন আমেরিকার বাইরে নির্মিত হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম হলিউডে নির্মাণ ফেরানোর জন্য বড় অঙ্কের ট্যাক্স ক্রেডিট প্রস্তাব করেছেন।
ট্রাম্প বলেন, "হলিউড এবং আমেরিকার অনেক এলাকা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এটি অন্যান্য দেশগুলোর সম্মিলিত ষড়যন্ত্র, যা এক জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, "এটি শুধু অর্থনীতির বিষয় নয়, এটি একটি বার্তা এবং প্রপাগান্ডা যুদ্ধ।"
যদিও হলিউড পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি, তবে যুক্তরাষ্ট্রে সিনেমার টিকিট বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে এবং মহামারির পর বড় বাজেটের সিনেমার মুক্তির হারও কমে গেছে। অনেক দর্শক এখন সিনেমা হলে না গিয়ে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে সিনেমা দেখছেন।
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বক্স অফিস আয় ছিল প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালে কোভিড মহামারির কারণে নেমে আসে মাত্র ২ বিলিয়নে। থিয়েটারগুলি আবার চালু হলেও, ২০১৯ সালের তুলনায় মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে এবং বক্স অফিসের আয় ৯ বিলিয়নের বেশি হতে পারেনি।
স্ট্রিমিং নেটওয়ার্কগুলির বেশিরভাগই হলিউড স্টুডিওগুলির মালিকানাধীন, তবে Netflix ছাড়া অধিকাংশ স্ট্রিমিং সার্ভিস লাভে আসতে অনেক সময় নিয়েছে। সম্প্রতি Disney+ এবং Max লাভ করেছে, তবে অনেক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম এখনও লাভে আসতে পারেনি।
বিদেশি সিনেমার ওপর শুল্ক আরোপ করা হলে হলিউডের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। কারণ, অনেক মার্কিন সিনেমা বিদেশে শুট করা হয় যেখানে করছাড়ের সুবিধা এবং কম পারিশ্রমিকে কাজ করা সম্ভব হয়।
ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করলেও, সেবার ওপর শুল্ক কখনোই আরোপ করেনি। তিনি ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, গাড়ি ও যন্ত্রাংশের ওপর ২৫% শুল্ক এবং চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন।
তবে এই শুল্ক সবই পণ্যের ওপর ছিল, সেবা বা চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে নয়। বিদেশি চলচ্চিত্রে ১০০% শুল্ক আরোপ করা হলে, এটি সেবাখাতে প্রথম নজির হতে পারে।